কলকাতা: চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেনের মতোই করোনা ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে ইতালিতে। এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত ১,১৯,৮২৭। মৃত্যু হয়েছে ১৪,৬৮১ জনের। গোটা দেশে চলছে লকডাউন। সেই ইতালিরই ট্রেভিসো প্রদেশের মন্টেবেলুনা শহরে আছেন বঙ্গসন্তান বিপ্লব দেবনাথ। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইতালিতে আছেন। পেশায় ফ্লাওয়ার ডিজাইনার বিপ্লববাবুও বাকি সবার মতো গৃহবন্দি ছিলেন। তবে এখন তিনি দোকান খোলার অনুমতি পেয়েছেন। ফুল, ফল, সবজির ব্যবসার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের দোকান খোলা এবং ক্রেতাদের বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ইতালি সরকার। ফলে ইস্টারের আগে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

নিজের দোকানে বসে ফোনে এবিপি আনন্দকে বিপ্লববাবু জানালেন, ‘আমাদের এখানে ভাল খবর হচ্ছে, তিনদিন ধরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের সব মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হবে। সব সুপারমার্কেটের সামনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে পরিবারের একজনই সুপার মার্কেটে যাচ্ছেন। ফলে বাকিদের পরীক্ষার জন্য সবার বাড়িতে চিকিৎসক পাঠানো হবে। উত্তর ইতালির পরিস্থিতি এখন অনেকটা ভাল। তবে দক্ষিণ ইতালিতে এখনও অবস্থা বেশ খারাপ। আমি কয়েকদিন সুপারমার্কেটে যাইনি। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই আমার বাড়িতেও হয়তো চিকিৎসকরা আসবেন।’

বিপ্লববাবু আরও জানিয়েছেন, ‘১৪ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে লকডাউন চলবে। দক্ষিণ ইতালিতে এখনও অনেক করোনা আক্রান্ত থাকায় মে মাস পর্যন্ত হয়তো কড়াকড়ি একটি কমিয়ে লকডাউন থাকতে পারে। সেই সময় হয়তো এক প্রদেশের লোকজনকে অন্য প্রদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। তাঁরা নিজেদের প্রদেশের সর্বত্র যেতে পারবেন। ইস্টারের আগে অন্যান্য বছরগুলিতে এই সময় উৎসবের পরিবেশ থাকে। কিন্তু এবার সবাই বাড়িতে বসে। কেউই গির্জায় যেতে পারবেন না। দোকান খোলার অনুমতি পাওয়ায় আমার অবশ্য লাভ হয়েছে। এতদিন দোকান খুলতে পারিনি। ফলে আমি সমস্যায় ছিলাম। দোকানে অবশ্য কোনও কর্মী বা ক্রেতাকে ঢুকতে দিতে পারব না। আমাকেই সবার বাড়িতে ফুল পৌঁছে দিতে হবে। না হলেই জরিমানা হবে।’

বনহুগলিতে বিপ্লববাবুর বাড়ি। সেই বাড়িতে তাঁর মা, দাদা আছেন। বাড়ির সবাইকে নিয়ে চিন্তিত বিপ্লববাবু। তিনি ফেসবুকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে একাধিকবার সবাইকে লকডাউন মেনে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকেই যেভাবে কোনও প্রয়োজন ছাড়াই বাইরে ঘুরছেন, তাতে ইতালিতে বসেই উদ্বিগ্ন এই বঙ্গসন্তান। তিনি ইতালির পরিস্থিতি চোখের সামনে দেখেছেন। তাই বাংলায় যাতে মৃত্যুমিছিল না হয়, তার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলছেন।