নয়াদিল্লি: প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বই প্রকাশের আগেই পরিবারের দ্বিমত প্রকাশ্যে চলে এল। ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ট্যুইট করে প্রকাশকের উদ্দেশে বই প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু প্রণবের মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় পাল্টা ট্যুইট করে বই প্রকাশে বাধা না দেওয়ার আর্জি জানান। ট্যুইটে বইয়ের নাম ভুল লেখায় দাদাকে কটাক্ষও করেন শর্মিষ্ঠা।


প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির লেখা ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স’ বইটি আগামী জানুয়ারিতে প্রকাশিত হওয়ার কথা। প্রকাশের আগেই বইটির কিছু অংশ প্রকাশ্যে এসেছে। বই ঘিরে তোলপাড় দিল্লির রাজনীতি। সূত্রের খবর, এই বইয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, তিনি ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর কংগ্রেস দিশাহীন হয়ে পড়ে।  সেই সময় ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী ও তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি। সেই কারণে ২০১৪-র নির্বাচনে উত্থান ঘটে নরেন্দ্র মোদির। প্রণব আরও লিখেছেন, কংগ্রেসের একাংশ একটা তত্ত্ব সামনে আনে যে তিনি ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হলে কংগ্রেস ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয় এড়াতে পারত। তিনি যদিও ওই তত্ত্বের সঙ্গে সহমত নন। প্রণব লিখেছেন, তিনি রাষ্ট্রপতি  হওয়ার পর সনিয়া দলকে সামলাতে পারেননি।  আর সংসদে দীর্ঘ অনুপস্থিতির জন্য মনমোহনের সঙ্গে অন্য সাংসদদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে ছেদ পড়ে।  এই বইয়ে মনমোহন ও মোদির তুলনাও টেনেছেন প্রণব। তিনি লিখেছেন, মনমোহন ব্যস্ত ছিলেন জোট সরকার বাঁচাতে। এর প্রভাব পড়ে সরকারে। অন্যদিকে ২০১৪-য় ক্ষমতায় এসে একনায়কের মতো সরকার চালান মোদি। তার ফলে সরকার, সংসদ ও বিচারবিভাগের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়।

আজ প্রথম ট্যুইটে প্রকাশকের উদ্দেশে অভিজিৎ লেখেন, ‘আমি এই স্মৃতিকথার লেখকের ছেলে হিসেবে আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি, দয়া করে বইটি প্রকাশ করবেন না। আমার লিখিত সম্মতি ছাড়াই সংবাদমাধ্যমে বইটির নির্দিষ্ট কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে। সেটাও বন্ধ করতে হবে।’

পরের ট্যুইটে অভিজিৎ লেখেন, ‘আমার বাবা আর নেই। তাঁর ছেলে হিসেবে বইটি প্রকাশিত হওয়ার আগে শেষবার এটির বিষয়বস্তু দেখে নিতে চাই। আমার বিশ্বাস, বাবা আজ বেঁচে থাকলে তিনিও এটাই করতেন।’

তৃতীয় ট্যুইটে প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ছেলে লেখেন, ‘আমি বইটির বিষয়বস্তু খতিয়ে দেখে লিখিত সম্মতি না জানানো পর্যন্ত প্রকাশ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি।’

এর দু’ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা ট্যুইট করে দাদাকে বেঁধেন শর্মিষ্ঠা। তিনি লেখেন, ‘আমি ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স’-এর লেখকের মেয়ে হিসেবে আমার দাদাকে আমাদের বাবার লেখা শেষ বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অযথা কোনওরকম বাধা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানাচ্ছি। অসুস্থ হওয়ার আগেই বাবা বইটির পাণ্ডুলিপি শেষ করেন।’

পরের ট্যুইটে শর্মিষ্ঠা লেখেন, ‘বইটির চূড়ান্ত খসড়ায় আমার বাবার হাতে লেখা নোট রয়েছে। তিনি যে মন্তব্যগুলি করেন, সেগুলিও রয়েছে। তিনি নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন। সস্তা জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে কারও বইটি প্রকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। সেটা হলে আমাদের প্রয়াত বাবার ক্ষতি করা হবে।’

তৃতীয় ট্যুইটে অভিজিৎকে কটাক্ষ করে শর্মিষ্ঠা লেখেন, ‘দাদা, এই বইয়ের নাম ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স’। তুমি ভুল লিখলে।’