নয়াদিল্লি: করোনা পরিস্থিতিতে ঋণের মাসিক কিস্তির সুদ কি মকুব করবে কেন্দ্রীয় সরকার? না কি এই পরিস্থিতিতেও মানুষকে সুদের অর্থ দিতে হবে? এ বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রকে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলল সুপ্রিম কোর্ট। আজ বিচারপতি অশোক ভূষণ, বিচারপতি আর সুভাষ রেড্ডি ও বিচারপতি এম আর শাহকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেছে, ‘দুর্যোগ মোকাবিলা আইনে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা থাকলেও, তারা ঋণের মাসিক কিস্তির উপর সুদের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেনি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আড়ালে লুকিয়ে থাকছে কেন্দ্র। এ বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’


এরপর আদালতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ‘আমরা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি এবং একসঙ্গে কাজ করছি।’

এর আগে গত ১৭ জুন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, দু’মাসের জন্য এই মামলার শুনানি স্থগিত রাখা হচ্ছে। এরপর আজ শুনানিতে সলিসিটর জেনারেলকে আদালত বলে, দুর্যোগ মোকাবিলা আইনের বিষয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানাতে হবে এবং বর্তমানে যে সুদ নেওয়া হচ্ছে, তার উপর অতিরিক্ত সুদ নেওয়া যায় কি না, সেটাও জানাতে হবে।

সলিসিটর জেনারেল বলেন, একইভাবে সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। পাল্টা মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ অগাস্ট। আমি শুধু এটাই বলতে চাই, যতদিন না আদালতে এই মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে, ততদিন যেন ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখার মেয়াদ শেষ না করা হয়।’ দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর আদালত বলে, এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১ সেপ্টেম্বর।

আগরার বাসিন্দা গজেন্দ্র শর্মা সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে জানান, গত ২৭ মার্চ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঋণের কিস্তির টাকা নেওয়া স্থগিত রাখা হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা ঋণ নিয়েছেন, এর ফলে তাঁদের কোনওরকম সুবিধাই হয়নি। এই সময়ে ঋণের কিস্তির উপর সুদ না নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিক আদালত, এই আর্জিও জানান গজেন্দ্র। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে বাঁচার অধিকারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুদ দিতে গেলে তিনি সমস্যায় পড়বেন। তাই তাঁকে সাহায্য করুক আদালত।

গজেন্দ্রর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ‘একবার যদি ঋণ বা সুদ মকুবের কথা জানানো হয়, তাহলে উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাতে কোনও বদল আনা উচিত নয়। এই পরিস্থিতিতে সুদের উপর সুদ ধার্য করার কোনও প্রয়োজন আমরা দেখছি না। এই সময়ে সুদ পুরোপুরি মকুব করার প্রশ্ন আসছে না। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি সুদের উপর সুদ নিচ্ছে। এরকম কঠিন সময়ে এটা গুরুতর বিষয়। একদিকে ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখা হচ্ছে, অন্যদিকে এর উপর সুদ নেওয়া হচ্ছে।’ এরপর আজ এ বিষয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে চাইল আদালত।