নয়াদিল্লি: পরকীয়া ফৌজদারি অপরাধ নয়, ৪৯৭ ধারা অসাংবিধানিক। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে পরকীয়াকে দায়ী করা যেতে পারে। রায় সুপ্রিম কোর্টের। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এই আইন স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। মহিলাদের মর্যাদা খর্ব করে। স্ত্রী কখনই ‘স্বামীর সম্পত্তি নয়’।
১৮৬০ সালে ব্রিটিশদের তৈরি ওই আইনের ৪৯৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি কোনও মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে এবং তাতে ওই মহিলার স্বামীর অনুমতি না থাকলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। তার প্রেক্ষিতেই আজ সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়।
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন সমাজকর্মী। তাঁদের দাবি, দুনিয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলতে এই মান্ধাতার আমলের আইনকে বহুদিন আগেই ছেঁটে ফেলা উচিত ছিল।
যে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এদিন এই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে, তাতে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি আর এফ নরিম্যান, এ এম খানউইলকর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি ইন্দু মালহোত্র। সকলেই ঐকমত্যে পৌঁছন যে, এই রায় সেকেলে, একতরফা এবং এর ফলে মহিলাদের সমান সুযোগ ও সমানাধিকার দেওয়ার পরিপন্থী। তাঁদের মতে, মহিলাদের প্রতি বৈষম্য সংবিধানের মূল কাঠামোর বিরুদ্ধ।
তবে, একইসঙ্গে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ জানিয়েছে, পরকীয়া কোনও ফৌজদারি অপরাধ না হলেও, একে সামাজিক ভুল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ফলত, ডিভোর্সের ক্ষেত্রে পরকীয়াকে দায়ী করা যেতেই পারে। বিচারপতি মিশ্র জানান, এমন কোনও সামাজিক লাইসেন্স থাকা কাম্য নয় যা একটা ঘরকে ধ্বংস করতে পারে। তাঁর মতে, অসুখী দাম্পত্যের কারণ নয় পরকীয়া। তবে অবশ্যই তা অসুখী দাম্পত্যের ফল।
এপ্রসঙ্গেই বিচারপতি খানউইলকর জানান, পরকীয়া ফৌজদারি অপরাধ নয়। তবে, দম্পতির একজনের পরকীয়ার জন্য অপরজন যদি আত্মঘাতী হন, তাহলে পরকীয়ার প্রমাণ পেশ করা হলে, তা আত্মহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে গণ্য হবে।
সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায়কে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা বলেন, এই আইনকে অনেকদিন আগেই বাতিল করা দরকার ছিল।