মুম্বই: অভিযোগ জানানো হয়েছিল চার মাস আগেই। অথচ পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নিল না। পুলিশি উদাসীনতায় হারিয়ে গেল ছেলেটা--- অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর প্রায় দু মাসের মাথায় এমনই অভিযোগ করল তাঁর পরিবার। ৯ পাতা জুড়ে নিজেদের যাবতীয় অভিযোগ সবিস্তারে জানিয়েছেন প্রয়াত অভিনেতার পরিজন। ওই অভিযোগপত্রে মুম্বই পুলিশ ও রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে যেমন সরব হয়েছে সুশান্তের পরিবার, তেমনই তুলে ধরা হয়েছে সুশান্তের জীবন-সংগ্রাম, তাঁদের বাড়ির কথা।
গত ১৪ জুন মুম্বইয়ের আবাসন থেকে সুশান্তের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অপমৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে কাঁটাছেড়া চলছে। অভিযোগপত্রের অনেকটাই মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে সরব প্রয়াত অভিনেতার পরিবার। লেখা হয়েছে, সুশান্ত মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর শোকপ্রকাশের সময়টুকু পাননি তাঁরা। ঘটনার তদন্ত না-করে পুলিশ ওর দেহ নিয়ে প্রদর্শনী শুরু করে। সুশান্তের পরিজনের বক্তব্য, অনেক আগেই পুলিশকে সব কিছু জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। সুশান্ত আত্মহত্যা করেননি, ওকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ ওকে পাগল প্রতিপন্ন করে আত্মহত্যা বলে চালাতে চাইছে। এই ঘটনাকে খুব স্বাভাবিক ঘটনা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল মুম্বই পুলিশ।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যে কোনও সফল মানুষের চারপাশে সব সময়ই কিছু ঠগ ও লোভী মানুষ ঘোরাফেরা করে। মনে করা হচ্ছে, রিয়া চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের দিকেই আঙুল তুলেছেন সুশান্তের স্বজনেরা। সুশান্তের মৃত্যুর মাস খানেক পেরিয়ে যাওয়ার পর কয়েকজন লোক কিছু নামকরা আইনজীবী, পিআর এজেন্সিকে সঙ্গে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে শুরু করে দেন। সেখানে ওকে অপমানের চেষ্টা করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে সিবিআই তদন্তের দাবিও জানানো হয়। পরিবারের বক্তব্য, সবচেয়ে পড় প্রশ্ন হল মানুষ কেন এদের (মুম্বই পুলিশ) কথায় বিশ্বাস করবে, যাঁরা নিজেদের অভিজাত মনে করে এবং ইংরেজি বলা লোকেদের ফ্যান বলে মনে করে?
বিবৃতিতে খানিক স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। লেখা হয়েছে, কয়েক বছর আগে সুশান্ত বা তাঁর পরিবারকে্ কেউ চিনত না। আজ সারা দেশ উদ্বিগ্ন, চিন্তিত। নানান দিক থেকে তাঁর পরিবারকে আক্রমণ করা হচ্ছে। অথচ বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্বপ্নের নগরীতে গিয়েছিল সুশান্ত। পরিবার বিশ্বাস করত কঠিন-কঠোর পরিশ্রমে। তার মাধ্যমে মুম্বইয়ে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন সুশান্ত। ৫ সন্তানকে নিয়ে সুখী পরিবার ছিল বলেই দাবি করা হয়েছে। মায়ের মৃত্যু পরিবারের কাছে ছিল খুব বড় ধাক্কা। ওই শোকের আবহেই সুশান্ত ঠিক করেছিল, সে অভিনেতা হবে। তার পরের ৮-১০ বছরে যা হয়েছে, সেটা শুধুমা্ত্র স্বপ্নেই ভাবা যায়। কিন্তু এখন যা হল, তা যেন আর কারও সঙ্গে না-হয়। আক্ষেপ সুশান্ত সিংহ রাজপুতের পরিবারের।