রাষ্ট্রপুঞ্জ: ৫০ মিনিটের ভারত-বিরোধী প্রচারের জবাব ৫ মিনিটেই। আর তাতেই কুপোকাৎ পাকিস্তান। এক বঙ্গতনয়ার ‘আগুনে’ জবাবে মেতে উঠল রাষ্ট্রপুঞ্জ। প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেট-দুনিয়া। শনিবার ঠিক এই চিত্রের সাক্ষী থাকল বিশ্ব।
শুক্রবার সন্ধ্যায় (ভারতীয় সময়) রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ক্রমাগত ভারত-বিরোধী প্রচার করে যান পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ১৫-২০ মিনিট সময় নির্ধারিত থাকলেও, প্রায় ৫০ মিনিট ধরে ভারতকে আক্রমণ করে গিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কাশ্মীর ইস্যুকে নিয়ে পরমাণু যুদ্ধের প্রচ্ছন্ন হুমকিও শোনা যায় ইমরানের গলায়। শনিবার ভোর রাতে (ভারতীয় সময়) ‘রাইট টু রিপ্লাই’-এর মাধ্যমে ইমরানের বক্তব্যকে খণ্ডন করে ভারত।





জবাবি বক্তব্য পেশ করতে বঙ্গতনয়া বিদিশা মৈত্রকে বেছে নেওয়া হয়, যিনি রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের ফার্স্ট সেক্রেটারি পদে রয়েছেন। ৫ মিনিটে পাঁচটি পাল্টা প্রশ্ন করে পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেন বিদিশা। বঙ্গতনয়ার প্রশ্নবাণে বেসামাল হয়ে পড়ে পাকিস্তান। তাঁর দৃপ্ত বাক্য-চয়ন ও বাগ্মীতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরা। বিদিশার বক্তব্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রাবীশ কুমার ও শিবসেনা নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী।
ইমরানের আনা যাবতীয় অভিযোগের বেছে বেছে উত্তর দেন বিদিশা। পাক প্রধানমন্ত্রীর সব দাবি শুধু খারিজ করাই নয়, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন পাকিস্তানের সব দ্বিচারিতা। কার্যত তুলোধনা করেন ইমরানের যাবতীয় মিথ্যাচারের। তাঁর প্রশ্ন, পাকিস্তান কি এটা স্বীকার করবে যে, এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা ১৩০ জন জঙ্গি ও ২৫টি জঙ্গি সংগঠনের তারা আশ্রয়দাতা? পাকিস্তান কি মানবে যে তারাই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যারা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা জঙ্গির পেনশনের ব্যবস্থা করেছে? বিদিশার এই প্রশ্নবান পাকিস্তানের আসল রূপ প্রকট করে দেয়।





বিদিশা আরও বলেন, কূটনীতিতে শব্দ গুরুত্বপূর্ণ। তাই গণহত্যা, রক্তের বন্যা, জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব, বন্দুক তুলে নেওয়া ও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করার মত শব্দ ব্যবহার করে তিনি শুধু মধ্যযুগীয় মানসিকতারই পরিচয় দিচ্ছেন, ২১ শতকের নয়। ইমরানের বক্তব্য বিদ্বেষ ছড়ানো ছাড়া কিছু নয়। তিনি বিশ্বকে আমরা-ওরা, ধনী-দরিদ্র, উন্নত-উন্নয়নশীল, মুসলমান-অবশিষ্ট বিশ্ব এইভাবে ভাঙতে চাইছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জে বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করছেন।





তবে, বিদিশার যে মন্তব্য চারদিকে আলোড়ন ফেলেছে ও যা আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, তা হল তাঁর পাক প্রধানমন্ত্রীকে ইমরান খান নিয়াজি বলে সম্বোধন। নেটিজেনরা একে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। টুইটারে অনেকেই লিখেছেন, অত্যন্ত বুদ্ধির সঙ্গে বিদিশা বাক্যচয়ন করেছেন। কারণ, ইমরান আদতে মিয়াঁওয়ালির নিয়াজি সম্প্রদায় থেকে এসেছেন। আবার ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সেনা কমান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজি, যিনি ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।





প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস (আইএফএস) অফিসার বিদিশা। পরীক্ষায় তিনি ৩৯ তম র‌্যাঙ্ক করেছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে বিদেশমন্ত্রকের সেরা ট্রেনি অফিসার হওয়ার জন্য স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের নবনিযুক্ত অফিসারদের অন্যতম হলেন বিদিশা। বিদেশমন্ত্রকের ফার্স্ট সেক্রেটারি বিদিশা এখন নীতি প্রণয়ন ও গবেষণা দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারির দায়িত্বে রয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি নিরাপত্তা পরিষদে ভারত-আঞ্চলিক দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া, তিনি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বিষয়বস্তুও দেখভাল করেন।