নিউইয়র্ক : ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে এবার বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করল পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে ফোন হ্যাকিংয়ের খবর। গোটা বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের পক্ষ থেকে অধিকার বিষয়ক দফতরের প্রধান মিচেল বাচেলেট বলেছেন, 'এই ধরণের নজরদারি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণে কড়া নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।' ব্যক্তি-তথ্য যাতে কোনওভাবে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যাতে কারোর হাতে চলে যেতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করার দিকটিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে যে শুধু অন্যের গোপন পরিসরে হানা দেওয়াই নয়, সেই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে যে কোনও ধরণের অপরাধমূলক কাজও সংগঠিত করা যায়। ভারতের একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে, সাংবাদিকদের ফোন ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাসের মাধ্যমে হ্যাক করা হয়েছিল বলে The Wire-এর রিপোর্ট সামনে আসার পর থেকে দেশে শুরু হয়েছে চরম রাজনৈতিক সংঘাতও।
সোমবার সংদের বাদল অধিবেশন শুরুর দিনেই সংসদের দুই কক্ষেই কেন্দ্রীয় সরকারকে যে ইস্যুতে চেপে ধরে বিরোধী। পাল্টা দাবি নস্যাৎ করে কেন্দ্রীয় সরকার। পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে ফোন হ্যাকিংয়ের চাঞ্চল্যকর খবর সামনে আসতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পদত্যাগ দাবি করেছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, যাঁরাই মোদি সরকারের সমালোচনা করছেন, তাঁদের ওপরই নজরদারি চালানো হচ্ছে। যদিও মোদি সরকারের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্মব সোমবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে দাবি করেন, এসব বিরোধীদের চক্রান্ত।
যদিও আক্রমণের ঝাঁজ তাতে থামছে না বিরোধীদের। কংগ্রেসের নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, 'ভারতীয় নাগরিকদের ফোনে মোদি সরকার এই পেগাসাস ঢুকিয়ে দিতে পারে। আপনার স্ত্রী-মেয়ের মোবাইলেও পেগাসাস দিয়ে দিতে পারে মোদি সরকার'। The Wire-এর রিপোর্ট অনুযায়ী রাহুল গান্ধী থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পেগাসাস নজরদারির আওতায় ছিলেন দু’জনেই। এমনকি হ্যাক করা হয়েছিল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ফোনও। যে প্রসঙ্গে বিজেপির প্রতি কটাক্ষের সুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে বলেছেন, গোহারা পরাজিতদের জন্য ২ মিনিটের নীরবতা। ED, CBI, NIA, IT, ECI-এর মতো সহযোগী থাকা পরও, বিজেপির অর্থ+ক্ষমতা+পেগাসাসের গুপ্তচরগিরি, বাংলার বিধানসভা ভোটে অমিত শাহের মুখরক্ষা করতে পারল না। দয়া করে ২০২৪ সালে আরও ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন!
সবমিলিয়ে ফোন হ্যাকিংয়ের বিষয় নিয়ে যখন ভারতের রাজনীতিতে তোলপাড়, তখনই রাষ্ট্রপুঞ্জের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হল ব্যক্তি-তথ্য সুরক্ষিত রাখতে নজরদারির বিষয়ে আরও কড়া নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যাপারে।