ওয়াশিংটন: পৃথিবীর কাছের কক্ষপথে ভারতের উপগ্রহ বিধ্বংসী (এ-স্যাট) ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থেকে ছড়িয়ে পড়া ২৫০ থেকে ২৭০ টি টুকরোটাকরার দিকে আমেরিকা নজর রেখে চলেছে। তবে এতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস)-এর কোনও বিপদ নেই বলে শুক্রবার জানিয়েছে পেন্টাগন।
মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক কম্যান্ডের জয়েন্ট ফোর্স স্পেস কমপোনেন্ট কম্যান্ড (জেএফএসসিসি) গত বুধবার ভারতের এ-স্যাট উত্ক্ষেপণ থেকে উদ্ভূত ২৫০ টি আবর্জনা টুকরোর দিকে সক্রিয়ভাবে নজর রাখা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় বিজ্ঞপ্তি প্রতিরক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উপগ্রহের মালিক বা পরিচালকদের নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী জারি করা হচ্ছে।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে আবর্জনা টুকরোগুলি ঢুকে না পড়া পর্যন্ত সেগুলির ওপর সক্রিয়ভাবে নজর রেখে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি জারির কাজ চলবে বলে জেএফএসসিসি জানিয়েছে।
মার্কিন এয়ার ফোর্স স্পেশ কম্যান্ড কম্যান্ডার লেফটেনেন্ট জেনারেল ডেভিড থম্পসন গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের এক শুনানিতে আইনপ্রণেতাদের জানিয়েছেন যে, জেএফএসসিসি এবং এয়ার ফোর্সেস ১৮ স্পেস কন্ট্রোল স্কোয়াড্রন বর্তমানে আবর্জনার ২৭০ টি ভিন্ন ভিন্ন টুকরোর প্রতি নজর রাখছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, আবর্জনা ক্ষেত্রের পরিধি ক্রমশ বাড়ছে, ফলে সংখ্যা আরও বাড়বে। আবর্জনা নিয়ে অবশ্য বিস্তারিত জানাননি থম্পসন।
তিনি বলেছেন, কোন উচ্চতায় এটি ঘটেছে তা জানতে পারা গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে স্পেস ট্র্যাক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো শুরু হয়। কোনও উপগ্রহের বিপদের সম্ভাবনা থাকলে সংশ্লিষ্ট পরিচালকের কাছে সরাসরি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হবে।
আর একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের কোনও বিপদ নেই।
ভারত যে কক্ষপথে এ-স্যাট পরীক্ষা চালিয়েছে, তার ১০০ কিমি উঁচু কক্ষপথে রয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র।
হাভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোনাথন ম্যাকডাওয়েল বলেছেন, পরীক্ষার সময় ভারত চিনের থেকে অনেক বেশি দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেছেন, কত বেশি আবর্জনা ছড়িয়েছে বা কতটা উঁচুতে রয়েছে তা জানা নেই। আমেরিকা বলছে যে, আড়াইশটা টুকরোর দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তবে ওই টুকরোগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কয়েকটা দিনতো সময় লাগবেই। তালিকাভূক্তকরণ পরই জানা যেতে পারে যে, পরিস্থিতি কতটা খারাপ।
ম্যাকডাওয়েল ১৯৭০ থেকে ভারতের মহাকাশ কর্মসূচী অনুসরণ করে আসছেন। তিনি বলেছেন, চিনের আগ্রাসী মহাকাশ সামরিকীকরণ কর্মসূচীর জবাবেই ভারত এই পরীক্ষা করেছে। এ ধরনের পরীক্ষার বিরোধিতা করলেও তিনি বলেছেন, ভারত এক্ষেত্রে চিনের তুলনায় ভারত অনেক বেশি দায়িত্বজ্ঞানের সঙ্গে তা করেছে। তিনি আরও বলেছেন, এর বিরোধী হলেও পরীক্ষা যদি কেউ করে তাহলে এটাই তুলনায় ভাল পথ। এক্ষেত্রে চিন যে ভুল করেছে, সে পথে হাঁটেনি ভারত।
তিনি বলেছেন, চিন অনেক বেশি উঁচু কক্ষে পরীক্ষা করেছে। এরফলে আবর্জনা এখনও মহাকাশে রয়ে গিয়েছে। ম্যাকডাওয়েল আরও বলেছেন, ভারতের পরীক্ষা থেকে যে আবর্জনা তৈরি হয়েছে, সেগুলি সম্ভবত অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং আগামী কয়েকমাসে নিচে নেমে আসার সময় পুড়ে যাবে। আর চিনের পরীক্ষা থেকে যে আবর্জনা তৈরি হয়েছে, সেগুলি নিচে নেমে আসতে কয়েক দশক সময় লাগতে পারে।