নয়াদিল্লি: ‘পশ্চিমবঙ্গের বার্তা হল-উন্নয়নের রাজনীতিতে আস্থা আছে, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতিতে নয়’, হলদিয়ার জনসভার ভিডিও ট্যুইট করে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।
রবিবার হলদিয়ায় আসেন মোদি। তিনি প্রথমে বিজেপির জনসভায় যোগ দেন, তারপর সরকারি অনুষ্ঠানে যান। সরকারি অনুষ্ঠান থেকে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।
বিজেপির সভার শুরুতেই উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মোদি বলেন, ‘উত্তরাখণ্ডে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। সবাইকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার সব চেষ্টা করছে। দুর্গত মানুষদের জন্য আমি, বাংলা তথা দেশ প্রার্থনা করছে।’
এরপর মোদি বলেন, ‘মেদিনীপুরের পবিত্র মাটিতে আসতে পেরে ধন্য মনে করছি। এই মাটিতেই তৈরি হয়েছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। মেদিনীপুরের মাটির গুণে আমি মুগ্ধ। বাংলার এই পবিত্র মাটিকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। বাংলায় ৫ হাজার কোটির প্রকল্পের সূচনা করব। বাংলার মানুষের প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। সাধারণ মানুষ এই সব প্রকল্পের প্রচুর সুবিধা পাবেন। বাংলার অনেক জেলায় এলপিজি পাইপ লাইনে পৌঁছবে। বাংলায় সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে চা বাগানের শ্রমিকদের অনেক উন্নতি হবে।’
এরপর তৃণমূল, বাম, কংগ্রেসকে আক্রমণ করে মোদি বলেন, ‘একসময় শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলা দিশা দেখাত। কেন বাংলায় উন্নয়নের সেই গতিধারা ধাক্কা খেল? উন্নয়নের সেই ধারা বজায় থাকলে বাংলার ছবি বদলে যেত। আমি জানতে চাই, কেন বাংলা এতটা পিছিয়ে পড়ল? বাংলার মানুষ তাই এখন পরিবর্তন চাইছেন। বাংলার দুরাবস্থার কারণ এখানকার সরকার। কংগ্রেসের আমলে দুর্নীতি ছিল। বামেদের আমলেও উন্নয়ন থমকে ছিল। মমতার পরিবর্তনের সওয়ালে ভরসা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু মমতার শাসনের দশ বছরে শুধুই নির্মমতা। বাংলায় পরিবর্তন নয়, বাম শাসনের পুনরুজ্জীবন হয়েছে। বাংলায় শুধু অপরাধ, হিংসার পুনরুজ্জীবন হয়েছে। দিদিকে উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করলে রেগে যান। ভারত মাতার স্লোগান শুনলেও রেগে যান মমতা। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, অথচ দিদি চুপ কেন? দেশ সব ধরনের ষড়যন্ত্রের কড়া জবাব দেবে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন করেছে তৃণমূল সরকার। বাংলার সরকার দুর্যোগের সময় দুর্নীতিতে জড়ায়। আমফানের ত্রাণ নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে। কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য বিনা পয়সায় রেশনের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু মমতার সরকার মানুষের কাছে সেই রেশন পৌঁছে দেয়নি। রাজ্যের কৃষক, গরিবদের জন্য ৪ কোটি জনধন অ্যাকাউন্ট খুলেছিল কেন্দ্র। সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করেছিল কেন্দ্র। করোনাকালে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা হাজার হাজার কোটি টাকা পায়নি। পিএম নিধি প্রকল্পে দেশের ১০ কোটি কৃষকরা টাকা পেয়েছেন। কিন্তু এই প্রকল্পের সুবিধা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পাননি। রাজ্য সরকার কৃষকদের এই টাকা থেকে বঞ্চিত করেছে। কিছুদিন আগে চাপে পড়ে কৃষকদের নাম পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। বাংলার প্রায় ২৫ লক্ষ কৃষক তৃণমূল সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু ২৫ লক্ষের মধ্যে মাত্র ৬ হাজার কৃষকের নাম পাঠিয়েছে রাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকার এখনও ৬ হাজার কৃষককে টাকা পাঠাতে পারছে না। কৃষকদের ব্যাঙ্কের তথ্য কেন্দ্রকে দেয়নি রাজ্য সরকার। মা, মাটি, মানুষের সরকারের জন্য টাকা পাননি কৃষকরা। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সরকার গড়বে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে যে টাকা পাননি কৃষকরা, সেই টাকা মিলবে। আয়ুষ্মান প্রকল্পে চিকিৎসায় ৫ লক্ষ টাকা থেকে বঞ্চিত রাজ্যের মানুষ। রাজ্য সরকারের জন্য আয়ুষ্মান প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রাজ্যের মানুষ। বাংলার মানুষ উন্নতিতে সবসময় সচেষ্ট কেন্দ্র। হাইওয়ে, ফ্লাইওভার, রেল, বিমান, পোর্ট, ইন্টারনেট সুবিধা দিতে সচেষ্ট কেন্দ্র। পিএম আবাস যোজনায় বহু মানুষ বাড়ি তৈরি করতে পেরেছেন। বাংলার উন্নয়নের গতি আনতে ডবল ইঞ্জিন সরকার প্রয়োজন। যখন আসল পরিবর্তন আসবে, তখন দুর্নীতিমুক্ত বাংলা হবে। ত্রিপুরাতেও বাম শাসনে কোনও উন্নতি হয়নি। বিজেপি সরকার আসার পর ত্রিপুরায় প্রভূত উন্নতি। কেন্দ্রের এক দেশ এক রেশন কার্ডের সুবিধা মেলেনি। সপ্তম বেতন কমিশন অন্য রাজ্যে চালু হলেও বাংলায় হয়নি। বাংলার সরকার কর্মচারীদের সময়মতো মাইনে দিতে পারে না। তৃণমূল পরপর অনেক ফাউল করেছে। বিরোধীদের আক্রমণ, টাকা লুঠ, বাংলায় মানুষ সব দেখছে। খুব দ্রুত বাংলা তৃণমূলকে রামকার্ড দেখাবে। পিসি-ভাইপোকে উৎখাত করতে বাংলার মানুষ মনস্থির করেছে। টিএমসির তোলাবাজ, সিন্ডিকেট আর কিছুদিন থাকবে। নিশ্চয় সংবিধান মেনে চলবে বাংলার প্রশাসন। এবার হবেই বাংলায় পরিবর্তন। তৃণমূলের লুকিয়ে থাকা বন্ধুদের থেকে সাবধান। এবার তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস একসঙ্গে ম্যাচ ফিক্সিং করছে। কেরলে কংগ্রেস-বামের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। পর্দার পিছনে যে খেলা চলছে, সেখান থেকে সতর্ক থাকতে হবে।’
এরপর সোমবার হলদিয়ার সভার ভিডিও ট্যুইট করে ফের বাংলার মনজয়ের চেষ্টা করলেন মোদি।