ঘরবন্দি শুভেন্দু, ‘দাদা’-র বক্তব্য শুনে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন অনুগামীরা
তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকেও কাটেনি জট। শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনা অব্যাহত। এই অবস্থায় শুভেন্দু অনুগামীদের অনেকেই ধন্দে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের মতে, শুভেন্দু যদি বিজেপিতে যান, তাহলে গেরুয়া ব্রিগেডেরই লাভ! আর তিনি যদি আলাদা দল গড়েন, তাহলেও লাভ বিজেপিরই। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জাদ মেহমুদ বলছেন, ‘এই ধরনের পরিস্থিতি আগে ফেস করেননি মমতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। শুভেন্দু যদি বিজেপিতে যান, বিজেপির লাভ। যদি আলাদা লড়েন, তাতেও বিজেপির লাভ। যখন ইন্দিরা মারা গিয়েছিলেন, তখন রাজীব প্রধানমন্ত্রী হন, তখন প্রণব একই কাজ করেছিলেন, যেমন করেছেন শুভেন্দু।’ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘শুভেন্দু যদি নিজে দল গড়েন, সেক্ষেত্রে বিজেপিরই লাভ। যদি শুভেন্দু দল গড়ে, বিজেপি ভাল জায়গায় আছে, তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। শুভেন্দু ভোট কাটবে তৃণমূলের, ত্রিশঙ্কু বিধানসভা তৈরি হলে শুভেন্দু ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হতে পারেন।’আবার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ঈশানী নস্কর বলছেন, ‘এখনই বিজেপির লাভ বলা যাচ্ছে না, সাদা-কালো রাজনীতি করলে চলবে না, তৃণমূলের ক্ষতি তো হবেই।’
৩০ অক্টোবর প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আমি প্যারাসুটেও নামিনি, লিফটেও চড়িনি, ধাপে ধাপে এই জায়গায় পৌঁছেছি।’পরে ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে কটাক্ষ করেন। একজন নাম না করে খোঁচা দিয়েছিলেন। আরেকজনও নাম না দিয়ে জবাব দিয়েছিলেন!কিন্তু, সবাইকে চমকে দিয়ে সেই দু’জনই মঙ্গলবার রাতে মুখোমুখি বৈঠকে বসেন!
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় শুভেন্দু-অভিষেক বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘শুভেন্দু ৫ বছর যুবর সভাপতি ছিল। অভিষেক এখন। কথা বলতে দিয়েছি ওদের।’
বৈঠক হল। কথা হল। কিন্তু, মন মিলল না বলেই আপাতত মনে হচ্ছে! বুধবার সকালে সৌগত বলেন, ‘শুভেন্দু মন পরিবর্তন করে থাকলে ওর বিষয়।’ বৈঠকের পর মঙ্গলবার রাতে তৃণমূল নেতৃত্ব, মিটমাটের দাবি করলেও, একবারও মুখ খোলেননি শুভেন্দু অধিকারী! আর এতেই তার অনুগামীদের কাছে বার্তাটা স্পষ্ট ছিল, দাদা কিছু না বলা পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নয়!
কলকাতা থেকে ১২৮ কিলোমিটার দূরে পূর্ব মেদিনীপুরে এখনও সেই এক পরিস্থিতি!শুভেন্দু অনুগামী ও নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আবু তাহের বলেছেন, ‘আমরা নিজেরাও বুঝতে পারছি না কী করব। আশা করি, মমতার সঙ্গে সমঝোতার জায়গায় আসবেন শুভেন্দু।’
শুভেন্দু অনুগামী ও কাঁথি ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি উত্তম বারিক বলেন, ‘দাদা তো কিছু বলেননি, উনি যখনই বলবেন সব পরিস্কার হবে।’ এদিন সকালে মুর্শিদাবাদ থেকে একদল তৃণমূল কর্মী এসেছিলেন কাঁথিতে, শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু, শান্তিকুঞ্জের বাইরে পা রাখেননি নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক।
সকাল থেকে বাড়িতে শুভেন্দু, বাইরে আসেননি, মুর্শিদাবাদের কর্মীরা এসেছিলেন, দেখা করেননি। কট্টর শুভেন্দু বিরোধী বলে পরিচিত নেতারা দাবি করছেন, শুভেন্দু যে অবস্থানই নিন না কেন, তাতে দলের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না। রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি বলছেন, ‘সংগঠন সংগঠনের মতো চলবে।’
প্রায় ২ মাস ধরে, তৃণমূলের ব্যানার ছাড়াই জনসংযোগ কর্মসূচি চালাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার ক্ষুদিরাম বসুর ১৩২ তম জন্মবার্ষিকীতে তমলুকে পদযাত্রা এবং সভা করবেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই কর্মসূচিও হবে তাম্রলিপ্ত জনকল্যাণ সমিতির ব্যানারে। বৃহস্পতিবারই হলদিয়ার কদমতলা মোড় থেকে সিটি সেন্টার অবধি মিছিল হবে দাদার অনুগামী-দের ব্যানারে। তা নিয়েও তৃণমূল বনাম শুভেন্দু অনুগামীদের মধ্যে আকচা-আকচি চলছে। হলদিয়া শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলছেন, ‘মমতাকে দেখে দল তৈরি হয়েছে, শুভেন্দু নয়, তিনি থাকলেন কী গেলেন, কিছু যায় আসে না, আমরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছি, কী করব আমরা, যারা মিছিলে বেরিয়েছিল, তাদের মনোবল কী হবে?’ পাল্টা শুভেন্দু অনুগামীরা বলছেন, দাদাই সব। তিনিই শেষ কথা। দু’পক্ষই তাল ঠুকছে। মানুষের কাছে শেষ কথা কে, তা অবশ্য ভোটের রেজাল্টই বলবে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -