নয়াদিল্লি: নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) দায়ের করা মাদক সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার হওয়ার তিন মাস পরে আজ জামিন পেলেন অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর ভাই সৌভিক চক্রবর্তী। আজ তাঁর জামিনের আর্জি মঞ্জুর করেছে বিশেষ এনডিপিএস আদালত। রিয়া এক মাস জেলে থাকার পরেই জামিন পেয়ে যান। তবে তাঁর ভাই এতদিন জামিন পাননি।


গত ৮ সেপ্টেম্বর অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর সঙ্গে মাদক-যোগের অভিযোগে গ্রেফতার হন রিয়া। মুম্বইয়ের বাইকুল্লা জেলে পাঠানো হয় এই অভিনেত্রীকে। এর আগে, বম্বে হাইকোর্টে করা ৪৭ পাতার জামিনের আবেদনপত্রের রিয়া দাবি করেন, সুশান্ত একাই গাঁজা খেতেন। স্যামুয়েল মিরান্ডা আর দীপেশ সাওয়ন্ত-কে দিয়ে গাঁজা আনাতেন। সুশান্তের রাঁধুনি নীরজ সিবিআই ও মুম্বই পুলিশকে জানান, মৃত্যুর ৩ দিন আগে গাঁজার জয়েন্ট বানাতে বলেন সুশান্ত। তাঁর কথা মতো, জয়েন্ট বানিয়ে তিনি একটি বাক্সে ভরে রেখে দেন সুশান্তের ঘরে। মৃত্যুর পর বাক্সটি খালি অবস্থায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ গাঁজার সবকটি জয়েন্ট শেষ! এতেই প্রমাণ হয় যে সুশান্ত একাই গাঁজা খেতেন। তার জন্য সহযোগীদের ব্যবহার করতেন।

রিয়া আরও দাবি করেন, অভিযোগ উঠেছে, ‘আমি সুশান্তের জন্য কখনও কখনও মাদক আনাতাম। তার দামও মেটাতাম! এই মামলায় আমার ভূমিকা শুধু এটুকুই। অর্থাৎ সুশান্তের জন্য স্বল্প পরিমাণ মাদক আনাতাম - এটা প্রমাণ হলে খুব বেশি হলে ১ বছরের সাজা হতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষিতে যে অভিযোগ উঠেছে তার ভিত্তিতে আমাকে জামিন দেওয়া যেতে পারে। যদি আজ সুশান্ত বেঁচে থাকত, তাহলে ওর বিরুদ্ধেও স্বল্প মাত্রায় মাদক নেওয়ার অভিযোগ উঠত। সে অভিযোগ প্রমাণ হলে ১ বছরের সাজার সংস্থার আছে। তাতে জামিনও পাওয়া যায়। তবে মাদক যিনি নিচ্ছেন, তাঁর ১ বছরের সাজা হচ্ছে আর যিনি মাদক কিনতে টাকা দিয়েছেন - তাঁর ২০ বছরের সাজার কথা বলা হচ্ছে - এটা ন্যায়সঙ্গত নয়।’

জামিনের আবেদনের নথিতে রিয়া এও দাবি করেন, ‘সুশান্তের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির পর জানতে পারি, ওর গাঁজা খাওয়ার অভ্যেস আছে। যাঁরা ঘরে কাজ করতেন, তাঁদেরই গাঁজা জোগাড় করতে বলতেন সুশান্ত। ওর এই অভ্যেস নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। সুশান্তের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, ২০১৫-১৬ তে কেদারনাথের শ্যুটিংয়ের সময় থেকে ও গাঁজা উপভোগ করতে শুরু করে। আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম।’

রিয়ার আরও দাবি, ‘গত ৮ জুন সকাল থেকে সুশান্ত নিজের ফোনে ব্যস্ত ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করতে ও একটা মেসেজ দেখায়। সেটা দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। দেখি, ওর বোন প্রিয়ঙ্কা ওষুধের তালিকা পাঠিয়েছে। আমি সুশান্ত-কে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে বলি। বোঝাই যে, গাঁজা খাওয়ার অভ্যেস আছে, তার মধ্যে এসব ওষুধ খেলে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। কিন্তু সুশান্ত কোনও কথা কানে তোলেনি। বোনের পাঠানো ওষুধই খাবে বলে জেদ ধরে। এরপরই ও আমাকে সব জিনিসপত্র নিয়ে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলে।’

সুশান্তের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। অনেকেই দাবি করেন, এই অভিনেতা আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে খুন করা হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং আত্মহত্যার তত্ত্বই জোরাল হয়েছে। তবে বলিউডে মাদক-যোগের জাল যে গভীরে, সে বিষয়ে তদন্তে অনেকদূর এগিয়েছে এনসিবি। মাদক-যোগে রিয়া ও সৌভিক ছাড়াও গ্রেফতার হন স্যামুয়েল মিরান্ডা, দীপেশ সাবন্ত সহ বেশ কয়েকজন। বলিউড তারকা অর্জুন রামপালের বান্ধবীর ভাইকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। কমেডিয়ান ভারতী সিংহ ও তাঁর স্বামী হর্ষ লিম্বাচিয়াকেও গ্রেফতার করেছে এনসিবি।