নয়াদিল্লি: আকসাই চিন এলাকা থেকে লাদাখ ঘিরে বয়ে চলা প্রাচীন গালওয়ান নদী ভারত ও চিনের চলতি সংঘাতের কারণ হয়ে উঠেছে। ডোকলাম সংকটের পর দুই দেশের এ ধরনের সংঘাত আর হয়নি। ২০১৭-তে ডোকলাম সংঘাতের অবসান ঘটেছিল।


১৯৬২-র যুদ্ধের সময় যে সমস্ত স্থানে ভারত ও চিনের বড়সড় লড়াই বেঁধেছিল, সেগুলির মধ্যে অন্যতম গালওয়ান নদী উপত্যকা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সুউচ্চ লাদাখ অঞ্চলের গালওয়ান উপত্যকায় দুই পক্ষের শিবির রয়েছে।

সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণাধীন বলে চিনের বিদেশমন্ত্রক দাবি করলেও রণকৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটি বিগত কিছুদিন ধরেই দুই দেশেরই সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে।

আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় সাজসরঞ্জাম বয়ে নিয়ে আসছে চিনের ট্রাক। আর ভারতও ডোকলামের মতো দীর্ঘ অচলাবস্থার জন্য প্রস্তুত হয় ভারত। ডোকলাম অচলাবস্থা ৭৩ দিন ধরকে চলেছিল।

দুই পক্ষের চলতি সংঘাতের একটা প্রধান কারণ গালওয়ান উপত্যকার কাছে সড়ক, যা এই এলাকার সঙ্গে দৌলত বেগ বিমানঘাঁটির সংযোগসাধন করছে। এই বিমান ঘাঁটি গত বছরের অক্টোবরে উদ্বোধন করেছিল ভারত। দেশের অভ্যন্তরে একটি বড়সড় সরবরাহ পথ এবং তা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার সমান্তরাল।গালওয়ান উপত্যকার মতো দুর্গম এলাকায় যাতায়াত ও সরবরাহ ব্যবস্থা সুগম করাই এর লক্ষ্য।

আর যে সড়কগুলি তৈরি হয়েছে, তা ভারতেরই ভূখণ্ডে। কিন্তু ড্রাগনের দেশ তা ভালোভাবে নিতে পারেনি। তারাও পশ্চিম হিমালয় অঞ্চলে তাদের তত্পরতা বাড়িয়ে তোলে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দুই পক্ষই বাহিনীর শক্তি বাড়িয়েছে। কিন্তু সেনা সংখ্যা ও কী ধরনের সরঞ্জামের বন্দোবস্ত হয়েছে, তা জানা যায়নি।

লাদাখের এক বাসিন্দা গুলাম রসুল গালওয়ানের নামেই গালওয়ান উপত্যকার নামকরণ করা হয়। ১৮৯৯-এ ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের অংশ হিসেবে তিনি এই নদীর গতিপথ আবিষ্কার করেন তিনি। আর এই স্থানটিই বর্তমানে ভারত ও চিনের সংঘাতের কারণ হয়ে উঠেছে।

১৯৬০-এ এই উপত্যকার পশ্চিম সীমা দাবি করেছিল।  এর ফলই হল ১৯৬২-র অচলাবস্থা। এর কয়েকমাস পরেই ভারত ও চিনের সীমান্ত যুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল।

৬২-র সংঘাতের আগেই উপত্যকা ঘিরে ছিল চিনের বাহিনীর উপস্থিতি। কিন্তু ভারতকে বিমানকে করে বাহিনী নিয়ে যেতে হয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হলে চিনের বাহিনী এই এলাকায়  বোমাবর্ষণ করেছিল।

এরপর থেকেই গালওয়ান উপত্যকা দুই দেশের মতবিরোধের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। স্ট্র্যাটেজিক হটস্পটে চিনের সাম্প্রতিক উস্কানি ফের সংঘাতের সৃষ্টি করেছে।

১৯৫৯-এর অক্টোবরে এই এলাকায় প্রথম 'গুলি' চলেছিল। এর তিন বছর পর দুই দেশের যুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল। ব্রিটিশ অধীনতা থেকে সদ্য মুক্ত দুটি দেশের লড়াই বেঁধেছিল। চিনের আগ্রাসী মনোভাব দেখে  ভারত হেলিকপ্টার ও বিমান থেকে সরবরাহের মাধ্যমে একটি ঘাঁটি তৈরির লজিস্টিক্যাল অপারেশন শুরু করলে ওই এলাকায় দুই পক্ষের বাহিনীর মধ্যে বিক্ষিপ্ত গুলি বিনিময় শুরু হয়েছিল।

কারাকোরাম পাসে দৌলতবার্গ ওলদিতে ভারতীয় চৌকির এক মাইলেরও কম দূরত্বে উভয় পক্ষই সীমান্ত পেট্রোল গড়ে তোলে। ১৯৬২-র যুদ্ধের আগে ওই ঘটনায় দুই দেশের উত্তেজনার পারদ আরও চড়তে থাকে।

সেই গালওয়ান উপত্যকাতেই দুই দেশের আবার সংঘাত দেখা দিয়েছে। ২০১৭-র ডোকলামের মতো উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রকই ফের আলোচনা শুরু করেছে। তবে সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতার কারণে উত্তেজনা বহাল রয়েছে।