সাউদাম্পটন: বল হাতে বিশ্বকাপে বিধ্বংসী ফর্মে যশপ্রীত বুমরা। তাঁর হাত থেকে বেরনো বিষাক্ত ইয়র্কার ব্যাটসম্যানদের রক্ষণ ভেদ করছে। বিপাকে ফেলছে বলের ভয়ঙ্কর গতিও। সমস্ত প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানই কার্যত এক বাক্যে মেনে নিচ্ছেন যে, বুমরাকে খেলাটা দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে।

ভারতীয় স্পিডস্টার নিজেও ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। আইসিসি-র ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বুমরা জানিয়েছেন, বল করতে তিনি ভালবাসেন। টানা বল করে যেতে চান। আর সেরা অনুভূতি? বুমরা বলেছেন, ‘ব্যাটসম্যানদের স্টাম্প ছিটকে দেওয়ার দৃশ্যই আমার কাছে সেরা অনুভূতি।’

আন্দ্রে রাসেল বা ক্রিস গেইলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের গলাতেও বুমরাকে নিয়ে সমীহ। রাসেল বলেছেন, ‘বুমরাকে খেলাটা চ্যালেঞ্জ। দুর্দান্ত ইয়র্কার করে। সেটাও ভয়ঙ্কর গতিতে।’  গেইল বলছেন, ‘বুমরার বল বোঝা সহজ নয়। রিভার্স সুইং করায়। দারুণ ইয়র্কার। বলের দুর্দান্ত গতি। ও ভিন্ন ধরনের ফাস্টবোলার। দলের এক্স ফ্যাক্টরও।’

বুমরার আত্মবিশ্বাসকে অনেকে তাঁর সাফল্যের মূল মন্ত্র মনে করেন। তিনি নিজে বলছেন, ‘নিজের দক্ষতায় নিজে বিশ্বাস না করলে অন্য কেউই বিশ্বাস করবে না। তাই নিজের দক্ষতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতেই হবে। আমি র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বাস করি না। আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল দলের সাফল্য। দলের সাফল্যে অবদান রাখতে পারলে আমি খুব খুশি হই।’





বুমরা শুনিয়েছেন তাঁর শৈশবের কাহিনি। সদ্য পিতৃহারা এক বালকের ক্রিকেটকে আঁকড়ে জীবনযুদ্ধে সফল হওয়ার বাস্তব। মা আহমেদাবাদের এক বেসরকারি স্কুলের প্রিন্সিপাল। ছেলে-মেয়েকে কখনও বাবার অভাব উপলব্ধি করতে দেননি। মায়ের স্কুলেই পড়াশোনা শুরু বুমরার। সঙ্গে ক্রিকেটও। মায়ের লড়াই দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। ইয়র্কার মারণাস্ত্র করে তুললেন কীভাবে? বুমরা বলেছেন, ‘বাড়ির উঠোনে খেলতাম। টিভিতে খেলা দেখে শেখার চেষ্টা করতাম। ছোট্ট জায়গায় খেলার সময় দেখেছি, ইয়র্কারই উইকেট নেওয়ার সেরা অস্ত্র। উপলব্ধি করি, ইয়র্কার দিয়েই বোলাররা বেশি উইকেট পায়। সেই থেকে এই অস্ত্রেই শান দিয়ে গিয়েছি।’

বুমরা শুনিয়েছেন বিশ্বকাপে সাফল্যের রসায়নও। বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে ভাল শুরু করাটা ভীষণ জরুরি। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে আমাদের শুরুটা ভাল হয়েছিল। এখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বোলারদের জন্য সহায়তা থাকে। তাই বলে উইকেট নেওয়ার জন্য বাড়তি কিছু করার দরকার নেই। সঠিক জায়গায়, নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেংথে টানা বল করে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তাতেই উইকেট আসবে।’ যোগ করেছেন, ‘শুরুতে উইকেট না পেলে ছটফট করলে চলবে না। বিশ্বকাপে যে দল স্নায়ুর চাপ ভাল সামলাতে পারছে, তারাই জিতছে। সবকিছু সাদামাটা রাখতে চাই।’

ব্যাটসম্যান আর স্পিনারদের দেশ হিসাবে ক্রিকেটবিশ্বে বরাবর সমাদৃত হয়ে এসেছে ভারত। সেই ধারণা এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। বুমরা, মহম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদবরা দেশের পেস বোলিং মানচিত্রটাই পাল্টে দিয়েছেন। বুমরা বলছেন, ‘পেস বোলিং ইউনিট হিসাবে পারফর্ম করাটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। সেটাই করছি। গত বছর অনেকগুলো বিদেশ সফর করেছি। বিদেশে সাফল্যের জন্য পেসারদের ভাল পারফর্ম করতেই হয়। তার জন্য পেসারদের প্রস্তুতিতে জোর দিতে হয়। তাতেই আমরা উপকৃত ও লাভবান হয়েছি। তারই পুরস্কার পাচ্ছি।’