বেজিং: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিনে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়াল। এই মারণ অসুখই এখন চিনজুড়ে ত্রাস তৈরি করেছে। উপসর্গ সামান্য ইনফ্লুয়েঞ্জার। কিন্তু, তাতেই চোখের নিমেষে ঘটে যাচ্ছে একের পর এক মৃত্যু। পরিস্থিতি এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মহাসচিব চিনে পৌঁছে গিয়েছেন, গোটা বিষয়টিকে সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে।
মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নেমেছে গোটা বিশ্ব। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিন থেকে নিজেদের সব কর্মীকে সরিয়ে ফেলেছে জাপানের বিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা হোন্ডা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা নিজ নাগরিকদের চিন সফর বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে। যে কোনও প্রকারের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পরিষেবা সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হংকং প্রশাসন।
চিন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ভাইরাসের মোকাবিলা কী ভাবে করা যায়, তার উপায় বের করতে দিনরাত এক করে গবেষণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি, এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকাতেও যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিচ্ছে চিনা প্রশাসন।  এখনও পর্যন্ত মেলা খবর অনুযায়ী, চিনের হুবেই প্রদেশে (এই প্রদেশের ইউহান শহরে এই মারণ ভাইরাসের উৎস) ১০০ জনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। এছাড়া, আরও ২,৭১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত চিনা প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এখনই না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিন।
শুধু চিন নয়, ভাইরাস থাবা বসিয়েছে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতেও। পাশাপাশি, ভাইরাসের হদিশ মিলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও কানাডাতেও। জার্মানি ও শ্রীলঙ্কা থেকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। সোমবার, দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়া প্রদেশে এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি স্টার্নবার্গের বাসিন্দা। শ্রীলঙ্কাও জানিয়েছে, সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এক চিনা মহিলার শরীরে এই মারণ ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা ওই মহিলা পর্যটক গত ১৯ তারিখ শ্রীলঙ্কায় আসেন বলে খবর।
হু-এর মহাসচিব তেদ্রোস আদানম ঘেব্রেইসুস জানিয়েছেন, তিনি চিনে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি চিনা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং এই সমস্যার সমাধান বের করার চেষ্টা করবেন। এর আগে, সোমবারই চিনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্যচিয়াং উহানে যান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। গত সপ্তাহে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে ‘আন্তর্জাতিকস্তরে জরুরি অবস্থা’-র তকমা দিতে রাজি হয়নি। এই তকমার ফলে, রাষ্ট্রপুঞ্জ বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সমন্বয় গড়তে পারত।
কিন্তু, গত সাত দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। যে কারণে, হু- জানিয়েছে, পরিস্থিতির মূল্যায়নে তাদের বড়সড় গলদ হয়েছিল। বর্তমানে, করোনাভাইরাস থেকে আন্তর্জাতিকস্তরে বিপদের ঝুঁকিকে ‘মাঝারি’ থেকে বাড়িয়ে ‘উচ্চ’ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পাশাপাশি, চিনে এই ঝুঁকির মান ‘অধিক উচ্চ’ বলে দেখানো হয়েছে।
উহান শহরে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি মানুষ গৃহবন্দি।  সেখানে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সর্বোচ্চ। উহানের মার্কিন কনস্যুলেট বিশেষ বিমানে করে সেখানে বসবাসকারী নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। একইভাবে নিজ নাগরিকদের ফেরত পাঠাচ্ছে ফ্রান্স ও জাপানও। এদিকে, এই পরিস্থিতিতে, জোর ধাক্কা খেয়েছে শেয়ার বাজার। মার্কিন শেয়ার বাজারে বিশাল পতন হয়েছে সোমবার।