বান্ধবগড়: জঙ্গলের রাস্তায় যাওয়ার সময় বাঘিনীর আক্রমণ। তীব্র আতঙ্কের মধ্যেও ৩০ বছরের এক যুবকের সাহস, অকুতোভয় মনোভাব ও উপস্থিত বুদ্ধি শুধু তাঁরই নয়, প্রাণ বাঁচাল তাঁর স্ত্রী ও ভাইয়েরও। মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের এক আধিকারিক।
জঙ্গলের মূল এলাকার মধ্যে অবস্থিতি গরপুড়ি গ্রামের বাসিন্দা আদিবাসী যুবক রাম মিলন বাইগা সোমবার বাইকে চড়ে স্ত্রী মীনা বাইগা (২৫) ও ভাই শ্যাম বাইগা (২৮)কে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সংরক্ষিত এলাকায় খিটাউলি রেঞ্জের কাছে তাঁদের আক্রমণ করে একটি বাঘিনী। রেঞ্জ অফিসার এনপি কার্তিকেয় এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঘটনার পর সেখানে বাঘিনীর পায়ের ছাপও পাওয়া যায়।
কার্তিকেয় জানিয়েছেন, বাঘিনীর আক্রমণে তিনজনই বাইক থেকে পড়ে যান। কিন্তু পালানোর চেষ্টা করার বদলে রাম মিলন স্ত্রী ও ভাইকে পালাতে বারণ করেন এবং আওয়াজ করে এই বাঘিনীকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। বন্য জন্তুদের তাড়ানোর জন্য ছোট বেলা থেকে বড়দের কাছে এই পরামর্শ শুনে এসেছেন রাম মিলন। বিপদের মুখে সেই পরামর্শ মেনেই রক্ষা পেলেন তাঁরা।
কার্তিকেয় জানিয়েছেন, রাম মিলনরা সেখানেই দাঁড়িয়েছিলেন এবং প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চিত্কার-চেঁচামেচি করে বাঘিনীকে তাড়াতে সক্ষম হন। পরে ডেপুটি রেঞ্জ অফিসার গজরাজ সিংহ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের আউটপোস্টে নিয়ে আসেন।
রাম মিলন ও মীরার হাতে ও পায়ে চোট লেগেছে এবং তাঁরা এখন জেলা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
কার্তিকেয় বলেছেন, ওঁরা যদি ছুটে পালানোর চেষ্টা করতেন, তাহলে তা তাঁদের সবার পক্ষেই বিপজ্জনক হতে পারত। কিন্তু রাম মিলনের উপস্থিত বুদ্ধি, সাহস ও কৌশল তাঁদের সবার জন্যই কাজে এল।
রাম মিলন বলেছেন, জঙ্গলে গরু-বাছুর চরাতে নিয়ে যাওয়ার সময় বড়দের চিত্কার করে বন্য জন্তুদের তাড়াতে দেখেছিলাম। ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পের মূল এলাকার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও এভাবে কোনও বন্য জন্তুর মুখোমুখি এর আগে হইনি। সোমবারের ঘটনা একেবারেই আলাদা। আমাদের পক্ষে তা ছিল ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা, যা কখনও ভুলতে পারব না।


রামমিলন জানিয়েছেন, বাঘিনীর হামলার সময় তো প্রথমে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেছেন, হামলার পর আমাদের থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে দেখলাম বাঘিনী দাঁড়িয়ে। কয়েক মুহূর্তের জন্য মাথায় কিছু কাজ করছিল না। এরপর বড়দের শেখানো কৌশলের কথা মনে আসে। তা প্রয়োগ করি এবং এতে সত্যিই কাজ হয়। আমি চিত্কার-চেঁচামেচি শুরু করার পর আমার স্ত্রী ও ভাইও তা করতে থাকে। এভাবে শুধু নিজেরই নয়, আমার ভাই ও স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে পেরেছি, এতে আমি অত্যন্ত খুশি।
অবসরপ্রাপ্ত বন সংরক্ষক জগদীশ চন্দ্র বলেছেন, বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে কাছাকাছি কোনও মানুষ চলে এলে জীবন বিপন্ন বোধ করে বাঘ বা বাঘিনী কখনও কখনও আক্রমণ করে। সংঘাত এড়াতে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়াই তখন সঠিক উপায়। দৌড়লে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, বাঘ বা বাঘিনীর বিপদের বোধ এতে বেড়ে যায়। পালিয়ে না গিয়ে চিত্কার-চেঁচামেচি করলে তা বাঘ বা বাঘিনীতে অবাক করে দিতে পারে। তবে পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।