নয়াদিল্লি: বাজেট-বঞ্চনার অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতি তরজা অব্যাহত। সেই আবহেই লোকসভায় আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গেল তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন-সহ কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে কড়া আক্রমণ করলেন তিনি। পরিসংখ্যান-সহ এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের গত ১০ বছরের মার্কশিট তুলে ধরেন অভিষেক। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় পরাজয়ের পর থেকে কেন্দ্র যদি বাংলাকে এক টাকাও দিয়ে থাকে, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক বলে এদিন সংসদে মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন তিনি। অভিষেকের ভাষণের সময় আগাগোড়া বিজেপি-র তরফ থেকে টিকা-টিপ্পনি উড়ে আসে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌমিত্র খাঁ-র মধ্যে বাদানুবাদে অধিবেশন তেতেও ওঠে। এমনকি স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গেও কথা কাটাকাটি হয় তৃণমূল সাংসদদের। (Abhishek Banerjee)


মঙ্গলবার সংসদে পেশ হওয়া বাজেট নিয়েই এদিন বলতে ওঠেন অভিষেক। গোড়াতেই কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত নাম বিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দেন তিনি। উল্লেখ করেন Galvanizing Organic Bio-Agro Resources Dhan (গো-ব-র-ধ-ন), Heritage City Development and Augmentation Yojana (হৃদয়)। একই ভাবে BUDGET-এর সংক্ষিপ্ত রূপকে তিনি বিশদে ব্যাখ্যা করবেন বলে জানান অভিষেক। অভিষেক জানান, B অর্থাৎ Betrayal (বিশ্বাসঘাতকতা, U অর্থাৎ Unemployment (বেকারত্ব), D অর্থাৎ Deprive (বঞ্চনা), G অর্থাৎ Guarantee & Ghotala (প্রতিশ্রুতি ও দুর্নীতি), E অর্থাৎ Eccentric (উদ্ভট) এবং T অর্থাৎ Tragedy (দুর্ভাগ্য). (Union Budget 2024)


বর্তমান সরকারের আমলে ঠিক কী কী ঘটেছে, এক এক করে বোঝাতে গিয়ে অভিষেক জানান-


বিশ্বাসঘাতকতা- অভিষেক, “২০১৪ সালে ‘অচ্ছে দিনে’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা এসেছিল বিজেপি। কিন্তু এতদিনে দেশের সাধারণ নাগরিক, দিনমজুর, গৃহবধূ, কৃষকদের সঙ্গে শুধু বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ২০১৪ সাল থেকে রান্না করা নিরামিষ খাবারের খরচই ৮ শতাংশ করে বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম ৪৩%, আলুর দাম ৩৯%, টমেটোর দাম ৪১% বেড়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম ১১০০ টাকা পার হয়ে গিয়েছে। গৃহস্থের সঞ্চয় গত ৫০ বছরে সর্বনিম্নে গিয়ে ঠেকেছে। গৃহস্থের ঋণ বেড়ে হয়েছে GDP-র ৩৯.১ শতাংশ। দেশের ৬৩ কোটি মানুষ দৈনিক ৩৮০ কোটির কম আয় করেন। ১৮ কোটির আয় দৈনিক ১৮০ টাকার কম। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারত ১১১তম স্থানে। প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ বলেছিল বিজেপি, এখন তা হয়েছে  ‘জো হমারে সাথ, হম উনকে সাথ’।  গত ১০ বছরে যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সাম্প্রদায়িকতা করেছে বিজেপি, তার সিকিভাগ সময়ও যদি মানুষের দেওয়া হতো, তাহলে এই অবস্থা হতো না। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলে বিজেপি। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, উত্তরপ্রদেশে তফসিলি জাতির বিরুদ্ধে ১৩ শতাংশ, তফসিলি উপজাতিদের বিরুদ্ধে অপরাধ ১৫ শতাংশ বেড়েছে। দলিতদের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশেই সবচেয়ে বেশি অপরাধ, তার পরই রাজস্থান দুই জায়গাতেই বিজেপি ক্ষমতায়। অথচ বাংলাকে বদনাম করছে। মঙ্গলসূত্র, মুজরার পর উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে ধর্মীয় যাত্রার জন্য দোকানের সামনে ধর্মীয় পরিচয়ের জানতে নাম ঝোলাতে বলা হচ্ছে, হিংসা, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণায় উস্কানি জোগাতে। সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ, পদক্ষেপ করার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কিন্তু সংসদে বিজেপি-র একজনও মুসলিম সাংসদ নেই। কোনও রাজ্যে মুসলিম বিধায়ক নেই ওদের। শুধু পতাকায় রংয়ের বৈচিত্র নয়, সংসদেও বৈচিত্র্য থাকতে হয়। তা না করায় আগেও খারাপ পরিণতি হয়েছে। প্রান্তিক মানুষ উপেক্ষিত হয়েছেন, সুবিচার পাননি, অসাম্য বেড়েছে, ঐক্য নষ্ট হয়েছে। অধিকার কেড়ে নেওয়া সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছেন মানুষ।”


বেকারত্ব- অভিষেক, “গত আট মাসে বেকারত্ব সর্বোচ্চ, ৯.২ শতাংশ। মোদি সরকার তৃতীয় বার, যুবসমাজ এখনও বেকার। (সংসদে চিৎকার-চেঁচামেচি বিজেপি সাংসদদের) দেখুন বেকারত্ব কী করেছে। বেকারত্ব থেকে এমনই হয়। দক্ষতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ৪০ কোটি তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেছিল। প্রশিক্ষণ পেয়েছেন মাত্র ১ কোটি ৪০০ লক্ষ। কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণের পাঁচটি প্রকল্পে অর্থমন্ত্রী ২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। আগে বলেছিলেন বছরে ২ কোটি চাকরি দেবেন। ধারেকাছেও নেই। এখন অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করছে। যুবসমাজ বাজেটে ৯০ মিনিট ভাষণ শুনতে চায় না। মহিলাদের বেকারত্ব ২২.৭ শতাংশে। বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও বললেও, বেটিকে চাকরি দিতে ভুলে গিয়েছে। বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্প রাষ্ট্রপুঞ্জের পুরস্কার পেয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ২ কোটি মহিলা বাংলায় অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হয়েছেন। ঔদ্ধত্য সরিয়ে লেখে শিখতে হয়। কিন্তু আমার বলতে দ্বিধা নেই যে, বিজেপি এবং নারীর ক্ষমতায়ন পরস্পর বিরোধী দু’টি শব্দ।”


বঞ্চনা- (সৌমিত্র খানের চেঁচামেচি) অভিষেক, “ওই সাংসদ যেভাবে স্ত্রীকে বঞ্চিত করেছেন। ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেন্ট্রাল ভিস্তা করেছে সরকার। কিন্তু দরিদ্র, গৃহহীনদের জন্য কী করেছে? (সংসদে তুলকালাম। পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কুকথা শোনা গেল। মন্তব্য রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়ার অর্জি। সৌমিত্রকে কটাক্ষ কল্যাণের। তেড়ে এলেন সৌমিত্র। দিলীপ সাইকিয়ার পরিবর্তে স্পিকারের আসনে ফের ওম বিড়লা। সংসদে যে বা যাঁরা নেই, তাঁদের সম্পর্কে কথা বলা যাবে না বলে জানালেন। বিজেপি এই নির্দেশ না মানলে কেন কিছু বলা হয় না, প্রশ্ন তৃণমূলের।) অভিষেকের প্রশ্ন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কি লোকসভার সদস্য? কেন বললেন উনি? আপনি পদের মানরক্ষা করুন। অনুরোধ করছি, ক্ষমা চাইতে বলুন। সংসদের গরিমা রক্ষা করুন। তবে আবার বক্তৃতা শুরু করব।” স্পিকার, “আমি রেকর্ড থেকে বাদ দিচ্ছি। আপনি আমাকে নির্দেশ দিতে পারেন না।” ফের বক্তৃতা শুরু করে অভিষেক বলেন, “সেন্ট্রাল ভিস্তার জন্য ২০ হাজার কোটি, অথচ দরিদ্র, গৃহহীনদের জন্য কিছু নয়। আবাস যোজনার টাকা দিচ্ছেন না। দরিগ্র মানুষের সঙ্গে বঞ্চনা করা হচ্ছে। বাংলা বিরোধী অবস্থান সরকারের। বাংলার কণ্ঠরোধের চেষ্টা হয়েছে, অপমান করা হয়েছে বাংলার সংস্কৃতির। বাংলাকে বদনাম করতে লাগাতা ষড়যন্ত্র হয়েছে। রাজনৈতিক লড়াইয়ে পেরে না উঠে, দরিদ্র মানুষের রোটি-কপড়া-মকান কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আজ রাজ্যসভায় বলেছেন, বাংলায় কেন্দ্রের কোনও প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়নি। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, কেন্দ্র কত টাকা দিয়েছে, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন উনি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর থেকে…১০০ দিনের কাজে, আবাসে ১০ পয়সাও দিয়েছেন বলে প্রমাণ দেখান। প্রকাশ্যে বলছি, শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। নিজেদের কাছে কাগজ নেই, আর গোটা দেশের কাছে CAA-র নামে কাগজ চাইছে! ১০০ দিনের কাজের ৪৯১৩ কোটি টাক আটকে রাখা হয়েছে। ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার পরিবার মাথার উপর ছাদ থেকে বঞ্চিত। আবাস যোজনার ৮১৪০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের ৮০০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে, কি না রংয়ের শর্তপূরণ হয়নি! ৩৩৪টি কেন্দ্রীয় দল বাংলায় গিয়েছিল। সব দেওয়ার পরও টাকা মেলেনি। বিজেপি-র মন্ত্রীদের কাছে গেলে প্রত্যাখ্যান মিলেছে। দিল্লিতে লড়াই করতে এলে পুলিশ দিয়ে আটক করা হয়। মহিলা সাংসদদের চুলের মঠি ধরে টেনে নিয়ে যায়। এরা নারীশক্তি নিয়ে কথা বলবে? বন্যা সামাল দিতে গতকাল বিহার, অসম, হিমাচলপ্রদেশ, সিকিম, উত্তরাখণ্ডের জন্য টাকা বরাদ্দ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অথচ বিজেপি-রই ছয় সাংসদ রয়েছে উত্তরবঙ্গে। এই হল বৈষম্য। আশাকরি জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের মানুষ শুনছেন। বাংলার মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না। মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস করিয়েছিল সংসদে। অথচ ২৪০-এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের দিলেও, লোকসভায় বিজেপি-র ৮০ জন মহিলা সাংসদ হতো। অথচ ওদের মহিলা সাংসদ মাত্র ২১ জন, ১৩%ও নয়। আমাদের মহিলা সাংসদ ৩৮%। শিক্ষার অধিকার হারিয়ে গিয়েছে। NEET করানো সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কেন্দ্রের। আমরা আলোচনা চেয়েছিলাম। একটি শব্দও খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যগুলি নিজ নিজ ডাক্তারি পরীক্ষা নিক বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, রাজি হয়নি কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ১২ হাজারের বেশি, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ৫০ হাজারের বেশি শূন্যপদ, উত্তরপ্রদেশেই ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি। অথচ প্রতি বছর দেশে ১৩ হাজার পড়ুয়া আত্মঘাতী হন। দেশের শ্রমজীবী মানুষরা বঞ্চিত। ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬% মজুরি বৃদ্ধি হয়। ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বৃদ্ধির হার ১.৪%। ট্রেনযাত্রীদের ৯৬% ট্রেনের জেনারেল এবং নন এসি কামরায় সফরে করেন। অথচ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই।”


প্রতিশ্রুতি ও দুর্নীতি- অভিষেক, “NEET দুর্নীতি, গ্যারান্টি উইদ জিরো ওয়ারেন্টি।” (ঘোটালা বলে চিৎকার সৌমিত্র খাঁ-র) অভিষেক, “নিজে নিজে আর কত গোল খাবে? গেলে বকুনি খাবে। নোটবন্দি করে কালোটাকা মুছে ফেলবেন বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। অর্থাৎ গ্যারান্টির ওয়ারেন্টি নেই। ৯৯ শতাংশ টাকাই ব্যাঙ্কের কাছে ফিরে এসেছে। বলেছিলেন সন্ত্রাস থাকবে না। জম্মু ও কাশ্মীরে গত ছয় মাসে ২৬টি সন্ত্রাস হামলা হ.েছে। ২৫ কোটি চাকরির কথা বলেছিলেন ২০১৪ সালে। ২০২৩ সালে জানালেন, ১ কোটি চাকরি হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রত্যেকের মাথায় ছাদ হবে বলেছিলেন। কাল বাজেটে অতিরিক্ত আরও ৩ কোটি বাড়ি নির্মাণের কথা বললেন অর্থমন্ত্রী। বাংলার আবাস যোজনার টাকা মেটানো হয়নি। অথচ বিমান আসছে ৮ হাজার কোটির। সেন্ট্রাল ভিস্তায় ২০ হাজার কোটির প্রাসাদ তৈরি হচ্ছে। আর দরিদ্ররা গৃহহীন হয়ে রয়েছেন। বাংলায় হেরে ১০০ দিনের কাজের একটা টাকাও দেয়নি। ২০২২ সালের মধ্যে বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবেন বলেছিলেন। এখন পিছিয়ে ২০২৬ সাল করা হয়েছে। এক কিলোমিটার বুলেট ট্রেন চালানোর জন্য ২০০ কোটি খরচ হয়। সাধারণ রেলপথের জন্য তুলনায় ১৫ কোটি খরচ। ট্রেন দুর্ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু কেন্দ্রী. বাজেটে রেলের নিরাপত্তার কোনও উল্লেখ নেই। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করবেন বলেছিলেন ২০২২ সালের মধ্যে, তা মাত্র ৩ শতাংশ হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১ লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। রোজ ৩০ জন আত্মঘাতী। ২০২২ সালের মধ্যে সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭৬১টি সন্ত্রাস হামলা হয়েছে। ”


উদ্ভট- অভিষেক, “নরেন্দ্র মোদির উদ্ভট কাজকর্ম সরকার তথা শাসন ব্যবস্থাকে সার্কাসে পরিণত করেছে। আসল ইস্যু থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোই উদ্দেশ্য। স্বৈরাচার সরকার হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করল। চার ঘণ্টার মধ্যে সব জোগাডড করে ঘরে ঢুকে যেতে হল সাধারণ মানুষকে। রাস্তায়, রেললাইনে কাটা পডডে ৮ হাজার ৭০০ জন মারা গেলেন, ছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকও। জোর করে ২০২০ সালে কৃষক আইন পাস করা হয়। বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি, আলোচনা হয়নি কৃক সংগঠনগুলির সঙ্গেও।” (স্পিকার ওম বিড়লা জানান, ৫.৫ ঘণ্টা আলোচনা হয়েছিল। তৃণমূলের দাবি, কোনও আলোচনা হয়নি। মিথ্যে কথা। স্পিকারের দাবি, আমি বলছি, আমি ভুল বলি না। নিজেরা সংশোধন করুন।)” অভিষেক, “৭০০ কৃষক মারা গিয়েছেন। এক মিনিটের জন্য শোকপালন করেছেন? আজ হাততালি বাজাচ্ছেন! হাতে রক্ত লেগে রয়েছে আমাদের। আলোচনা ছাড়া বিল পাস হয়। চ্যালেঞ্জ করছি, আমাকে ভুল প্রমাণ করুন। যেখানে যেতে বলবেন যাব।” (স্পিকার-হুঁশিয়ারি, চ্যালেঞ্জ দেবেন না সংসদে। এসব সংসদের বাইরে করবেন।) অভিষেক, “কাঁটাতার, সিমেন্টের বোল্ডার, পেরেক পোঁতা হয়েছিল রাস্তায়, কৃষকরা ঢুকতে না পারেন। আসল চেহারা বোঝা হয়ে গিয়েছে। ২০১৬ সালে নোটবন্দি করে ৫০০-১০০ টাকার নোট বাতিল করা হয়। কালো টাকা মুছে যাওয়ার পরিবর্তে জালনোট বেড়েছে। ২০২২ সালে ৫০০ টাকার জালনোট ছিল ২০০ শতাংশের বেশি, ২০০০ টাকার নোট ৫৪ শতাংশ। রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গেলেন ১৩০ জন।” (স্পিকার-২০১৬ সালের কথা ছাড়ুন। ২০১৯-এর নির্বাচনও হয়ে গিয়েছে।)


দুর্ভাগ্য- অভিষেক, “এই হল উদ্ভট সিদ্ধান্ত। ওঁরা যখন জওহর লাল নেহরুর কথা বলেন, ৬০ বছর আগের কথা বলেন, আপনি বর্তমানের কথা বলতে বলেন না। এই পক্ষপাত চলবে না। বাজেট নিয়েই কথা বলছি। বিপ্লব দেব ১০০ বছর আগের কথা বলছিলেন, জরুরি অবস্থার কথা বলছিলেন, তখন চুপ ছিলেন আপনি। এটাই ট্র্যাজেডি, যেটা আপনারা সংসদে করছেন। কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘অ্যাক্ট অফ গড নয়, অ্যাক্ট অফ ফ্রড’। মোরবিতে ১৪১ জন মারা গেলেন, গুজরাত-দিল্লি-জবলপুরে বিমানবন্দরের ছাদ ভেঙে গেল, প্রথম বর্ষাতেই রামমন্দিরের ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়তে লাগল, উত্তরকাশীতে ১৭ দিন শ্রমিকরা ভেঙে পড়া সুড়ঙ্গে আটকে রইলেন, বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় ৩০০ জন মারা গেলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ন’জন মারা গেলেন, এগুলো কী? রেলমন্ত্রীর হাতে রক্ত। মানুষের ভরসার পরিবহণ রেল, অথচ তা মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত ২৪৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩ সালেই ১৫টি দুর্ঘটনা। অথচ রক্ষণাবেক্ষণ নেই। ৫৮ হাজার ৪৫৯ কোটি বলে এখনও ৬৭২ কোটিই খরচ হয়েছে। প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষণ কোচে ২০ হাজার কোটি দেওয়ার কথা ছিল, এখনও পর্যন্ত মিলেছে ৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। দেড় বছর ধরে জ্বলছে মণিপুর। ২০০ জন মারা গিয়েছেন। ৭০ হাজার ঘরছাড়া। বাজেটে কোনও উল্লেখ নেই। আর একটা ট্র্যাজেডি হল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। আমি, আমার স্ত্রী, বয়স্ক মা-বাবা, আমার ১১ বছরের মেয়ে, ৪ বছরের ছেলে, আমার আইনজীবী, পিএ…আমাকে দিয়ে উদাহরণ তৈরির চেষ্টা করেছে বিজেপি। বাংলার মানুষ, আমার কেন্দ্রের মানুষ জবাব দিয়েছেন। আমি মানুষের সামনে মাথানত করব, ক্ষমতাশালীর সামনে নয়। সরকারের ধার ১৬০ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আর বাংলার ৬ লক্ষ কোটি নিয়ে উপহাস করেন! বাংলার মানুষই ভোট দিয়ে বিজেপি-র ১২ জন সাংসদকে নির্বাচিত করেছেন। এখনও বাংলাকে উপেক্ষা করছেন।”


বক্তৃতা শেষ করে অভিষেক বলেন, “এই বাজেটে ফিনান্সের চেয়ে ফিকশন বেশি। অবকি বার ৪০০ পার বলে বাংলায় হেরেছে, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে ধাক্কা খেয়েছে। বলেছিল জো রাম কো লায়ে, হম উনকো লায়েঙ্গে, ব্যাকফায়ার করেছে। আমি বলব, প্রভু রাম আয়ে, তো কুছ ন্য়ায় আয়া। কুছ ওয়ক্র জরুর লাগা, পর ইনসাফ আয়া। অযোধ্যায় লজ্জাজনক ভাবে হেরেছেন, উপনির্বাচনে বদ্রীনাথে হেরেছেন। ওয়ক্ত বদল গয়া হ্যায়। প্রধানমন্ত্রী একটি দুর্বল, ভঙ্গুর, নড়বড়ে সরকার জোট সরকার চালাচ্ছেন। দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগের পরিবর্তে এখন মোদির রাজনৈতিক সার্ভাইভ্যালের জন্য বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আসল কথা হল, ধার করা সময়ের মধ্যে রয়েছেন আপনারা। থোড়া সবর রাখিয়ে, কুর্সি কা পেটি বাঁধ লিজিয়ে, মওসম বিগড়নে ওয়ালা হ্যায়।”


এদিনের অভিষেকের ভাষণ নিয়ে আপত্তি জানান বিজেপি সাংসদ বাঁশুরি স্বরাজ। অভিষেক ‘বিট্রেয়াল’, ‘মিনিয়ন’, ‘এক্সেনট্রিকে’র মতো অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করেছেন, তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেন। অভিষেকের ভাষণের অংশ রেকর্ড থেকে বাদ দিতে বলেন। স্পিকার তাঁকে সঠিক পদক্ষেপের অশ্বাস দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি অভিযোগ করেন, নারী, দলিতদের বিরুদ্ধে যে অপর্ধার কথা উত্তরপ্রদেশকে নিয়ে বলছেন, তা আসলে বাংলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।