কলকাতা: কেউ এখনও স্পষ্ট করে সবটা বলতে পারে না। কারোর আবার শ্রবণশক্তি ততটা প্রখর নয়। কারোর রয়েছে কো-মর্বিডিটি। সূর্যের আলো দেখার পর থেকেই অব্যাহত তাদের জীবনযুদ্ধ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে অবিরাম লড়াই চলছে। বিশেষ সক্ষমতার জোরেই তারা গেয়ে চলেছে জীবনের জয়গান। করোনা আবহে হার না মানা সেই লড়াই যেন আরও অনেকটা জোরদার হয়েছে। আর তাদের এই লড়াইয়ে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে বাবা মায়েদের। এমনটাই বার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই তৃতীয় ঢেউয়ের চোখ রাঙানি। আর এই পর্বে শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তুলনায় অনেকটাই বেশি। এমনটাই মত চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞদের একাংশের। আর তারই প্রস্তুতি হিসেবে একাধিক রাজ্য ইতিমধ্যেই চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নতি করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সতর্ক বাবা মায়েরাও। শিশুর কোনও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখছেন তাঁরা। তবে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের ক্ষেত্রে এই নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের মধ্যে অনেকেই কথা বলতে পারে না। অনেকে আবার শুনতে পারে না ঠিক করে। কারোর আবার স্নায়ুর সমস্যাও থাকে। ফলে সেই সব শিশুদের পক্ষে শরীর কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে তা বোঝাতে পারাটা খুব কঠিন। তাই তাদের ক্ষেত্রে বাবা মায়ের আরও বেশি সতর্ক থাকা, শিশুকে বেশি নজরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এবিষয়ে মূলত দুটো কথা মাথায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অব পেডিয়াট্রিকস তথা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাস প্রসূন গিরি। তিনি বলেন, "যারা বিশেষভাবে সক্ষম শিশু তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ অনেক বেশি কঠিন হয়। যারা স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে, যারা বয়সে বড় অথচ কথা বলতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ জটিল হতে পারে।" তাহলে এই সব শিশুদের বাবা মায়েরা কীভাবে সতর্ক হবেন? কীভাবে বুঝবেন শিশু করোনা আক্রান্ত হল কি না?
- সাধারণ সময়ে সন্তান যে ধরনের কাজ করে সেই রকম কাজ করছে কি না তা দেখতে হবে।
- খাওয়া দাওয়া করছে কি না দেখা প্রয়োজন।
- জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না সেটাও নজরে রাখতে হবে।
- প্রয়োজনে অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখতে হবে।
- ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য স্পিচ থেরাপি, ফিজিও থেরাপির মতো একাধিক থেরাপি করা হয়ে থাকে। সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে কলকাতায় এই ধরনের কেন্দ্রের সংখ্যা ৩০টি। করোনা আবহে এই ধরনের কেন্দ্রগুলির মধ্যে অনেক কেন্দ্রই বন্ধ রয়েছে বলে সূত্রের খবর। আবার অনেক কেন্দ্র খুললেও সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে শিশুকে সেখানে পাঠাতে চাইছেন না বাবা মায়েরা। আর তাতে সমস্যা বাড়ছে সংশ্লিষ্ট শিশুদের। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও অনলাইনে থেরাপি শুরু করা উচিত। কারণ, যে শিশুরা থেরাপির সাহায্যে কথা বলতে শুরু করেছিল তারা তা ভুলতে বসেছে। অন্যদিকে বাবা মায়েদের তাঁরা পরামর্শ দিচ্ছেন সব রকম বিধি মেনেই কেন্দ্রগুলিতে শিশুদের ফের পাঠানো যেতে পারে।
চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি বলেন, "করোনা পর্বে এই ধরনের শিশুরা অনেক বেশি অবহেলিত হয়েছে। কারণ, এদের জীবনটা পুরোটাই থেরাপি নির্ভর। থেরাপি বন্ধ করে দেওয়া হলে এই শিশুরা আবার পিছিয়ে যায়। তাই যারা কিছুটা কথা বলতে শিখেছিল অনেকেই তা ভুলে গেছে। বাবা, মায়েরা রয়েছেন উভয় সঙ্কটে। তাই ব্যালেন্স আনাটা জরুরি। যে সময় সংক্রমণ বাড়বে সেই সময় বন্ধ রেখে বাকি সময় থেরাপি চালু করা উচিত। আখেরে লাভ হবে শিশুদের।" বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের মধ্যে অনেকেরই কো-মর্বিডিটি থাকে। ডায়বেটিস, ওবিসিটি থাকে। সেই সব নিয়ন্ত্রণে আছে সেসম্পর্কে নজর রাখতে হবে বাবা মায়েদের। তৃতীয় ঢেউ সংশ্লিষ্ট শিশুদের বাড়িতেই বিভিন্ন শরীরচর্চা করা যেতে পারে। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এমন খাবার খাওয়াতে হবে প্রতিদিন।
গত মাসে এইমসের অধিকর্তা রণদীপ গুলেরিয়া জানান, দেশে ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে আছড়ে পড়তে চলেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। তিনি জানান, কোভিড-সতর্কতা সঠিকভাবে না মানার কারণেই ভারতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আগাম সতর্ক স্বাস্থ্য দফতর। এনিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে, বৈঠক করেন রাজ্য সরকার গঠিত ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি। গত মাসে ওই বৈঠকে তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় চিকিত্সা পরিকাঠামো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে বিভিন্ন হাসপাতালে ১২-১৮ বয়সীদের জন্য বেড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একাধিক হাসপাতাল সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের বেড বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরাও।