নিউ দিল্লি : অনুমোদন পাওয়ার পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই ভ্যাকসিনের প্রতি ব্যাচের পরীক্ষাও। কোভিডের বিদেশি ভ্যাকসিনের অনুমতি দিয়ে আজ এই ঘোষণা করে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া। তবে, সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিনের নিজের দেশের ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির সংশাপত্র থাকতে হবে।


কোভিড ভ্যাকসিন ইস্যু ছাড়া, করোনার তৃতীয় ঢেউ যা কি না শিশুদের উপর বেশি প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা নিয়েও ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে 'আনকাট'-এর জন্য আজ চিকিৎসক সঞ্জয় রাই-এর সঙ্গে কথা বললেন ABP নিউজের সিনিয়র সাংবাদিক দিবাঙ্গ। সঞ্জয় AIIMS-এর কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক। এছাড়া তিনি নামী এই প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রিন্সিপ্যাল ইনভেস্টিগেটর। AIIMS-এর এই অধ্যাপক করোনার তৃতীয় ঢেউ এবং ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানালেন।


প্রশ্ন : শিশুদের উপর কোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য কি ভলান্টিয়ার পাওয়া যাচ্ছে ?


চিকিৎসক সঞ্জয় রাই : আমরা প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি আবেদন পেয়েছি। এর আগে প্রাপ্তবয়স্কদের উপর ট্রায়ালের সময়, দেশের প্রতি কর্তব্যের জায়গা থেকে অনেকেই আবেদন করেছিলেন। তখন মানুষ উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এখন যখন মায়েদের সঙ্গে কথা বলছি, তাঁদের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ ধরা পড়ছে। তবুও, আমাদের কাছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ভলান্টিয়ার আছে। প্রায় ১০ গুণ বেশি।


প্রশ্ন : এটা বলা হচ্ছে যে, কোভিডের তৃতীয় ঢেউ শিশুদের উপর প্রভাব ফেলবে। যে কারণে তাদের জন্য দ্রুত ভ্যাকসিন প্রয়োজন। আপনি কি এই ধারণার সঙ্গে সহমত ?


চিকিৎসক সঞ্জয় রাই : কীভাবে এই তৃতীয় ঢেউ আসবে তা নিয়ে বিবৃতির একটা বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি থাকা উচিত। যে কোনও সময় ঢেউ আসতে পারে। এই ধরনের রোগ আসার সময় ঢেউ আসতে-যেতে থাকে। আমরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে চেষ্টা করি, পরবর্তী ঢেউ কখন আসবে তা নিয়ে ভবিষ্যবাণী করার।


যখন এটা শিশুদের আক্রান্ত করবে, সেরোসার্ভে হবে সবথেকে ভাল সূচক। একাধিক সেরোসার্ভে থেকে জানা গিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে ইতিমধ্যেই অনেক বেশি শিশু আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু, শিশুদের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা গিয়েছে। কাজেই এটা বিশ্বাস করার কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই যে, এতদিন পর্যন্ত সেঅর্থে আক্রান্ত হয়নি বলে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 


মহামারী বিদ্যার সঙ্গে জড়িত কেউই এটা বুঝতে পারছে না যে, এরকম তত্ত্ব কেন ছড়ানো হচ্ছে ? বাবা-মা এবং শিশুদের এনিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এর কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই।


প্রশ্ন : ফার্মা কোম্পানিগুলি কি এই ধারণা ছড়াচ্ছে যাতে মানুষ মনোযোগ দিতে বাধ্য হন এবং এই সংস্থাগুলি ভ্যাকসিন থেকে লাভ করতে পারে ?


চিকিৎসক সঞ্জয় রাই : এটা বলা ঠিক হবে না যে ফার্মা কোম্পানিগুলি এটা ছড়াচ্ছে। যদিও, কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি ছাড়া যদি এরকম একটা পরিবেশ তৈরি করা হয়, তাহলে এটা অবশ্যই ঠিক যে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে একাজ করছেন। খোলা মনে এটা নিয়ে ভাবা উচিত আমাদের। যদি এর কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি না থাকে, তাহলে আমাদের এটা ভাবা উচিত যে, কায়েমি স্বার্থের জন্যই এই বিষয়টি ছড়ানো হচ্ছে। কেন এই ধারণা নিয়ে এত কথা বলা হচ্ছে এবং এত বড় আকারে ছড়ানো হচ্ছে ? এমনকী বিশেষজ্ঞরাও কখনো কখনো বিজ্ঞানসম্মতভাবে না ভেবে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন।


প্রশ্ন : সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বিদেশ থেকে আসা ভ্যাকসিনের স্থানীয় স্তরে কোনও ট্রায়াল বা পরীক্ষা হবে না। এই সিদ্ধান্তটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন ?


চিকিৎসক সঞ্জয় রাই : প্রথমদিকে আমাদের বিদেশি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন ছিল। কারণ আমাদের দেখার প্রয়োজন ছিল যে, কীভাবে কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে কোনও একটা রোগ কীভাবে ছড়ায়। স্থানীয় মানুষের উপর সেই ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, ইউরোপের থেকে করোনায় মৃত্যুর হার কম এশিয়ায়। একই রোগ বা ওষুধ সব জায়গায় একইভাবে কাজ করে না। জরুরি ভিত্তিতে সরকার এর(বিদেশি ভ্যাকসিন) অনুমোদন দিয়েছে।


এপ্রিলে কোনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিবর্তে করোনা পরিস্থিতি দেখে ব্রিজ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কথা বলা হয়। 


কিন্তু, কয়েকদিন আগে যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে তাতে পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়ার পরিবর্তে এলোমেলো পরীক্ষার বিষয়টি বেছে নেওয়া উচিত ছিল। যাতে কম্পানিগুলির এনিয়ে সচেতন থাকে এবং গুণগত মান বজায় রাখা হয়। গুণগত দিক থেকে আমাদের আপোশে যাওয়া উচিত নয়। অন্যথা কে দায়ী থাকবে ?


ওষুধের মৌলিক নীতি হচ্ছে, 'কোনও ক্ষতি নয়'- অর্থাৎ যদি কোনও উপকারে না আসে তাহলে ক্ষতি যেন না হয়-এটা বজায় রখা প্রয়োজন।