ধূলিসাৎ হয়েছে বাড়ি-ঘর। দেশের একটা বড় অংশ তাসের ঘরের মতো মিশেছে মাটিতে । এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে হয়ত পাওয়া যাবে প্রাণহীন দেহ। প্রকৃতি প্রমাণ করে দিয়েছে, মানুষ কতটা অসহায়। ভূমিকম্পের পর আফগানিস্তানে মারা গিয়েছেন শত শত মানুষ। এই পরিস্থিতিতেও সাহায্যের হাত খুঁজে পেলেন না ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকার নারীরা। হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ভূমিকম্পবিধ্বস্ত এলাকায় উদ্ধারকারীরা এগিয়ে আসেননি মহিলাদের উদ্ধার করতে। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তালিবান-শাসিত দেশের চরমপন্থী নীতি, যা ক্রমেই অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছে আফগান নারীদের। কট্টর রীতিনীতি যে মহিলাদের প্রাণের থেকেও দামি , তাই প্রমাণ হল ভূমিকম্পের পর। সূত্রের খবর, উদ্ধারকারীরা বেশির ভাগই পুরুষ হওয়ায় মহিলাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে যাননি। কারণ সে-দেশে পরপুরুষদের ছোঁয়া নিষেধ। মহিলা উদ্ধারকারী না-থাকায় আটকে পড়া অনেক মহিলাকে উদ্ধার করা হচ্ছে না। অন্যদিকে কেউ কেউ মহিলাদের দেহ না-ছুঁয়ে পোশাক ধরে টেনে মৃতদেহ বের করে আনছে।
তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে নারীদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ । নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, কেউই মহিলাদের সাহায্যে এগিয়ে যায়নি। তাদের কী প্রয়োজন তা জিজ্ঞাসা করেনি । এমনকী তাদের কাছেও যায় নি। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, পর্দাপ্রথা সেখানে এতটাই প্রবল, পুরুষ মেডিকেল টিমের সদস্যরা আহত মহিলাদের সাহায্যেও এগিয়ে যায়নি। তারা পুরুষ এবং শিশুদের চিকিৎসা করেছে। কিন্তু নারীদের শুধু আলাদা সরে যেতে বলা হয়, কিন্তু তাদের চিকিৎসা করা যায়নি, সামাজিক প্রথা অনুসারে।
তালিবান শাসনামলে আফগানিস্তানের নারীরা মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। চার বছর আগে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফিরে আসে তালিবান। তারপরই নারীদের অবস্থা আরও মর্মান্তিক হয়। আফগানিস্তান সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে,এই ভূমিকম্পে ২২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন । ৩,৬০০ জন আহত হয়েছেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর, পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পূর্ব আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বহু মানুষ আহত হয় । বাড়িঘর ভেঙে পড়ে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৩। ২০ মিনিটের মধ্যে তিন-তিনবার আফটারশক হয়। রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে জালালাবাদের উত্তর-পূর্বে ২৭ কিলোমিটার দূরে ভূপৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে ছিল কম্পনের উৎসস্থল। আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের জেরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, পেশওয়ার, রাওয়ালপিণ্ডি, অ্যাবোটাবাদেও কম্পন অনুভূত হয়। কম্পনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, দিল্লি এবং লাগোয়া এলাকাও কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে মাঝরাতে অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।