নয়াদিল্লি: সন্ত্রাসে মদত জোগানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলেও নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে। তার পরও সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসীদের রুখতে কডডা পদক্ষেপ করেনি পাকিস্তান। বরং ভারতের একের পর এক নাশকতার ঘটনায় তাদের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠে জঙ্গিদের নাম জড়িয়েছে। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে এবার পাকিস্তান সেনার মুখপাত্রের সঙ্গেই জঙ্গিযোগ উঠে এল। এই মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে সংঘাত নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে বার্তা দিয়ে চলেছেন পাকিস্তানের Inter-Services Public Relations (ISPR)-এর ডিরেক্টর জেনারেল, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি। তিনি নিজে আন্তর্জাতিক স্তরে জঙ্গি ঘোষিত ব্যক্তির ছেলে বলে জানা যাচ্ছে। (Ahmed Sharif Chaudhry)
পাকিস্তান সেনার তিন-তিনটি Star-প্রাপ্ত আধিকারিক আহমেদ শরিফ। তাঁর বাবা সুলতান বশিরুদ্দিন মাহমুদ, যে ছিল ঘোষিত জঙ্গি। আল-কায়দা প্রধান, আমেরিকার ৯/১১ হামলার চক্রী ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সুলতান বশিরুদ্দিন। রাষ্ট্রপুঞ্জ তাঁকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করেছিল। পেশায় বিজ্ঞানী ছিলেন সুলতান বশিরুদ্দিন। তালিবান এবং আল-কায়দাকে রাসায়নিক, জৈব এবং পরমাণু অস্ত্র নিয়ে তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর ধ্যান-ধারণা নিয়েও বিতর্ক ছিল। কাল্পনিক চরিত্র Djinn বা জ্বীনকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার কথা বলেছিলেন তিনি। (Pakistan News)
২০২২ সালে পাকিস্তানের Inter-Services Public Relations (ISPR)-এর ডিরেক্টর জেনারেল নিযুক্ত হন আহমেদ শরিফ। তাঁর বাবা সুলতান বশিরুদ্দিন ছিলেন পরমাণু বিজ্ঞানী। পাকিস্তানের পরমাণু শক্তির জনক বলা হয় বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খানকে। কিন্তু সুলতান বশিরুদ্দিন পাকিস্তানের হয়ে অনেক গোপন কাজকর্ম করেন। একসময় পাকিস্তান অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনে ছিলেন তিনি। Ummah Tameer-E-Nau নামের অকটি দক্ষিণপন্থী সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন সুলতান বশিরুদ্দিন, ২০০১ সালে যেটিকে নিষিদ্ধ করে আমেরিকা। রাষ্ট্রপুঞ্জের আল-কায়দা স্যাংশন কমিটি তাঁকেও নিষিদ্ধ করে। আমেরিকার ফরেন অ্যাসেটস অফিসও নিষিদ্ধ করে তাঁকে।
আমেরিকার গোয়েন্দারা লাদেনের সঙ্গে সুলতান বশিরুদ্দিনের সাক্ষাতের কথা জানতে পারেন। আল-কায়দা এবং তাদের সহযোগীদের হাতে পরমাণু বোমা উঠুক, তা কোনও অবস্থাতেই চায়নি আমেরিকা। ৯/১১ হামলার পর সুলতান বশিরুদ্দিনের বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ ওঠে, তা হল— ওসামা বিন লাগেন, আল-কায়দা এবং তালিবানকে অস্ত্রশস্ত্র এবং সংশ্লিষ্ট উপকরণ সরবরাহ, বিক্রয় এবং হস্তান্তরে যুক্ত ছিলেন তিনি। অর্থসংগ্রহ, পরিকল্পনা, সহযোগিতা এবং হামলার প্রস্তুতিতেও অংশগ্রহণ করেন।
তবে সুলতান বশিরকে নিয়ে শুধুমাত্র আমেরিকাই উদ্বিগ্ন ছিল না, পাকিস্তানে তাঁর সহযোগীরাও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছিলেন। ইসলামি চরমপন্থার প্রতি সুলতান বশিরের সমর্থন, ইসলামের সঙ্গে বিজ্ঞানের সংমিশ্রণ ঘটানোর তাঁর যে চেষ্টা, তাতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন সকলে। একরকম জোর করেই পদ থেকে অবসরগ্রহণে বাধ্য করা হয় তাঁকে। Ummah Tameer e-Nau নামের অলাভজনক সংস্থা চালানোর বাহানায় আসলে লাদেন এবং তালিবানকে তথ্য সরবরাহ করতে শুরু করেন তিনি। আফগানিস্তানে লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে আলোচনাও করেন। এমনকি ২০০১ সালে তালিবানের তদানীন্তন প্রঝান মোল্লা ওমরের সঙ্গেও দেখা করেন সুলতান বশিরুদ্দিন। পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য কী পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন, সেই নিয়ে আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের হয়ে প্লুটোনিয়াম বোমা বানানোর কাজে হাত দেন সুলতান বশিরুদ্দিন। এমনকি ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে তালিবান যখন কাবুল ছেড়ে চম্পট দেয়, সেই সময় তাঁর নকশা উদ্ধার হয় সেখান থেকে। আমেরিকার চাপে ২০০১ সালে সুলতান বশিরুদ্দিনকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের ISI. জিজ্ঞাসাবাদে লাদেনের সঙ্গে দেখা করার কথা মেনে নেন সুলতান বশিরুদ্দিন। এই মুহূর্তে অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন তিনি। ইসলাম এবং বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে বইও লিখে চলেছেন। আর তাঁরই ছেলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি এই মুহূর্তে পাক সেনার মুখপত্র পদে আসীন।