ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝেই আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের কাছে ঝুলি পেতে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান। এদিকে একাধিক দেশ সন্ত্রাসবাদদমন ইস্যুতে ভারতের পাশে মৌখিক ভাবে দাঁড়ালেও, দেখা গেল সবার ভোটে রমরমিয়ে ঋণ বাগিয়ে ফেলল পাকিস্তান। পাকিস্তানকে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার অতিরিক্ত ঋণ মঞ্জুর করে দিয়েছে আইএমএফ।  ভারতীয় মুদ্রায় হিসেব করলে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। 

ভারত আইএমএফের ঋণ সংক্রান্ত বোর্ডের বৈঠকে নীতিগত অমিল থাকায় ভোটদানে বিরতই ছিল ভারত। শুধু মাত্র এখন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বলে নয়, ভারতের মূল যুক্তি ছিল,  এর আগেও বিভিন্ন সময় বড় বড় ঋণ পেয়েছে পাকিস্তান। সেগুলো যে কী কাজে লেগেছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ভারত। টাকার সদ্ব্যবহারের প্রশ্নে পাকিস্তানের  ‘খারাপ ট্র্যাক রেকর্ড’ রয়েছে বলে মনে করে ভারত।  কিন্তু অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের মতামতেই কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে ভয়ানক জঙ্গি হামলার কয়েকদিন পরও পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের অনুমোদনের দিল আইএমএফ। 

ভারত আইএমএফ নির্বাহী বোর্ডের সভায় ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেদের বিরুদ্ধ অবস্থান স্পষ্ট করতেই। কারণ ,  আইএমএফ প্রোটোকলে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।  ভারত এবিষয়ে তীব্র বিরোধ করেছে। ভারত মনে করে, গত ৩৫ বছর ধরে বারবার একইভাবে পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান যদি সত্যিই এই অর্থ সঠিক খাতে খরচ করত, তাহলে আর নতুন করে ঋণের প্রয়োজন হত না। ২০২১ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্ট উল্লেখ করে এও দাবি করা হয়, প্রজাতান্ত্রিক সরকার থাকলেও সামরিক বাহিনী বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে। সেই সংক্রান্ত খরচও প্রচুর। সীমান্ত পার করে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগও করা হয় ভারতের পক্ষ থেকে। এরপর আইএমএফ-এর ঋণে আপত্তি জানিয়ে, ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকে ভারত।

IMF নির্বাহী বোর্ডে ২৫ জন ডিরেক্টর থাকেন।  IMF-এর এই বৈঠকে ভোটদানের ক্ষমতা প্রতিটি সদস্যের অর্থনৈতিক ক্ষমতা অনুসারে হয়। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলির ভোটদানের গুরুত্ব ভারতের থেকে বেশি। এছাড়া এখানকার ভোটাভুটির ব্যবস্থায় formal "no" vote -এর অধিকার নেই।  হয় পক্ষে ভোট দিতে হবে অথবা বিরত থাকতে হবে। ঋণ বা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কোনও বিধান নেই।

ভারত এই সিস্টেমটিই পছন্দ করছে না, যেখানে বিরুদ্ধ ভোটের অধিকার নেই। বিরত থাকার মাধ্যমে,আসলে  ভারত আইএমএফের ভোটদান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার মধ্যে তার তীব্র ভিন্নমত প্রকাশ করেছে।  আনুষ্ঠানিকভাবে তার আপত্তি লিপিবদ্ধ করার সুযোগটি ব্যবহার করেছে। ভারত মনে করে , পাকিস্তান গত ৩৫ বছরের মধ্যে ২৮ বছর ধরে সমর্থন পেয়েছে।  যার মধ্যে গত পাঁচ বছরে চারটি ঋণ নিয়ে তারা আদৌ কোনও অর্থবহ প্রকল্পে ব্যায় করেনি।  সেইসঙ্গে ভারত এমন একটি দেশকে তহবিল প্রদানের দৃঢ় বিরোধিতা করেছে যারা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে বছরের পর বছর মদত দিয়ে চলেছে।