নয়াদিল্লি: আস্ত একটি বিমান গায়েব। অথচ হুঁশই ফিরল না! কয়েক দিন বা কয়েক মাস নয়, দীর্ঘ ১৩ বছর বেমালুম বিমানের কথা ভুলে ছিলেন সকলে। অবশেষে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বের করা হল বিস্মৃত বিমানটিকে। বিমানটি Air India-র বলে জানা গিয়েছে। অথচ এমন কোনও বিমান আছে বলে মনেই ছিল না তাদের। বিষয়টি সামনে আসতেই তাই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। (Air India)
গত ১৩ বছর ধরে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে ছিল Air India-র কার্গো বিমানটি। বিমানবন্দরের একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ২০১২ সাল থেকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল Air India-র Boeing 737-200 বিমানটিকে। দীর্ঘ সময় বিমানবন্দরে জায়গা দখল করে থাকা অকোজে বিমান সরাতে সম্প্রতি উদ্যত হন কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই বিষয়টি সামনে আসে। (Boeing 737 Aircraft)
গত পাঁচ বছরে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এমন ১৪টি অকেজো বিমান সরানো হয়েছে। নতুন বিমানকে জায়গা করে দিতেই জায়গা খালি করার সিদ্ধান্ত। কলকাতা বিমানবন্দরে দু’টি হ্যাঙ্গারও তৈরি হতে চলেছে। সেই মতো জায়গা খালি করতে গিয়ে Boeing 737-200 বিমানটির উপর নজর পড়ে। Air India-কে অনুরোধ করা হয় বিমানটি সরিয়ে নিয়ে যেতে।
যদিও এমন কোনও বিমান আছে বলে নাকি জানাই ছিল না Air India-র! সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সংস্থার রেকর্ড থেকেও বিমানটি কার্যত গায়েব হয়ে যায়। কলকাতা বিমানবন্দরের তরফে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে টনক নড়ে। তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১২ সালেই বিমানটির উড়ান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে সেটি পড়েছিল।
কিন্তু আস্ত বিমান এভাবে ভুলে যাওয়া যায় কি? Air India-র CEO ক্যাম্পবেল উইলসন বলেন, “পুরনো বিমান নষ্ট করে ফেলা এমনিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই বিমানটি আছে বলেই জানতাম না আমরা। কলকাতা বিমানবন্দরের বন্ধুবর্গ বিষয়টি জানান এবং বিমানটিকে সরাতে বলেন। তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, বিমানটি সত্যিই আমাদের। আমরা তাই সরিয়ে নিয়েছে। আলমারি থেকে আরও একটি মাকড়শার জাল টেনে সরানো গেল।” তিন বছর আগে Air India-র বেসরকারিকরণ ঘটে এবং TATA Group-এর হাতে মালিকানা ওঠে। সেই সময়ই রেকর্ড থেকে বিমানটি বাদ পড়ে যায় বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ১৪ নভেম্বর শেষ পর্যন্ত ৪৩ বছর বয়সি ওই বিমানটিকে শেষ পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বের করা হয়। ট্র্যাক্টর-ট্রেলারে চাপিয়ে সেটিকে পাঠানো হয় বেঙ্গালুরু। ওই বিমানটিকে ব্যবহার করে সেখানে ইঞ্জিনিয়ারদের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেখানো হবে। সেই লক্ষ্যেই অকোজে হয়ে যাওয়া বিমানটিকে বিক্রি করে দিয়েছে Air India.
Boeing 737-200 VT-EHH নামে নথিভুক্ত ছিল। ১৯৮২ সালে Indian Airlines বিমানসংস্থায় সেটির অন্তর্ভুক্তি ঘটে। ১৯৯৮ সালে Alliance Air-কে ইজারা দেওয়া হয় বিমানটি। ২০০৭ সালে আবারও Indian Airlines-এ ফিরে যায় এবং পণ্যবাহী বিমান হিসেবে কাজ শুরু করে। ওই বছরই Indian Airlines এবং Air India মিশে যায়। ভারতীয় ডাকঘর কিছুদিন বিমানটিকে ব্যবহার করে। শেষে ২০১২ সালে সেটিকে বাতিল করা হয়। সেই থেকেই বিস্মৃত হয়ে পড়েছিল বিমানটি।
গত ১৩ বছর তাদের জায়গায় দাঁড় করিয়ে রেখার জন্য Air India-র কাছ থেকে ১ কোটি টাকা পার্কিং ফি তুলেছে কলকাতা বিমানবন্দর। অকেজো বিমানটি কিনেছে বেঙ্গালুরুর Bangalore International Airport Ltd. কিছু বেসরকারি সংস্থাও যন্ত্রপাতি কিনছে। সম্প্রতি যে অকেজো বিমানগুলিকে সরিয়েছে কলকাতা বিমানবন্দর, তার মধ্যে ছিল ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ডগলাস DC-3 ডাকোটা বিমানও। ডাচ বাহিনীর হাত থেকে ইন্দোনেশিয়ার নেতাকে উদ্ধার করতে সেটি ১৯৪৭ সালে উড়িয়েছিলেন ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েক। Alliance Air-এ আরও দুু’টি অকেজো বিমান রয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরে।