নয়াদিল্লি: মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সেই নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। এবার দেশের সংসদে বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অখিলেশ যাদব। হতাহতের আসল সংখ্যা বিজেপি সরকার গোপন করছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। (Akhilesh Yadav on Mahakumbh)


মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের জবাবে কথা বলতে গিয়ে লোকসভায় এমন অভিযোগ করলেন অখিলেশ। তাঁর বক্তব্য, “সরকার শুধু বাজেটের সংখ্যাই দিয়ে যাচ্ছে। মহাকুম্ভে হতাহতের পরিসংখ্যানও দিন দয়া করে। সর্বদল বৈঠক ডাকার দাবি জানাচ্ছি আমরা। মহাকুম্ভের আয়োজন নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। মহাকুম্ভের বিপর্যয় মোকাবিলা এবং হারানো ও প্রাপ্তি বিভাগের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক সেনার।” (Mahakumbh Stampede Death Toll)


অখিলেশ আরও বলেন, “মহাকুম্ভে মৃত্যুর পরিসংখ্যান, আহতের সংখ্যা, ওষুধ, ডাক্তার, খাবা, জল, পরিবহণ, সব তথ্য সংসদে তুলে ধরতে হবে। মহাকুম্ভে বিপর্যয়ের জন্য যে বা যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।  যাঁরা সত্য গোপন করছেন, শাস্তি দিতে হবে তাঁদেরও। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের কাছে জানতে চাই, কোনও দোষই যদি না থাকে, তাহলে সংখ্যা (হতাহতের) ধামাচাপা, লুকনো এবং মুছে দেওয়া হল কেন? যাঁরা ডিজিটাল কুম্ভ আয়োজনের দাবি করছেন, তাঁরা হতাহতের ডিজিট জানাতে পারছেন না। কেউই মা-বাবাকে হারিয়েছেন, কেউ মেয়েকে, কেউ ভাইবোনকে। কত সংখ্যক শিশু নিখোঁজ, এখনও সেই তথ্য নেই।”



অখিলেশ আরও বলেন, “প্রয়াগরাজে যাঁরা পুণ্যাস্নানে গিয়েছিলেন, তাঁদের দেহ ফিরেছে বাড়িতে। প্রিয়জনকে হারিয়েছেন পুণ্যার্থীরা। পুণ্যার্থীদের দেহ মিলেছে, অথচ মৃত্যুর কথা মানছিলই না সরকার। হতাহতের কথা যখন জানা গেল, সরকার হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছড়াতে লাগল। চটি-জুতো, শাড়ি ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়েছিল। বুলজোজার নামিয়ে সেসব আবর্জনার মতো সরিয়ে ফেলা হল। সেসব কোথায় ফেলা হল, তাও জানেন না কেউ।”


সরাসরি যোগীকে আক্রমণ করেন অখিলেশ। তাঁর বক্তব্য, “রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর আগে শোক পর্যন্ত প্রকাশ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। ১৭ ঘণ্টা পর সত্যতা স্বীকার করে সরকার। এঁরা সত্য স্বীকার করতেই জানেন না।”


গত ২৯ জানুয়ারি মহাকুম্ভের ত্রিবেণী সঙ্গমে অমৃত স্নান ঘিরে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তাতে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে, ৬০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দল, সকলেরই দাবি, হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি। ওই রাতে এক জায়গায় নয়, বরং দু’জায়গায় পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষ মারা যান বলে দাবি উঠে আসছে। পাশাপাশি, হতাহতের সংখ্যা গোপন করার অভিযোগও উঠছে। 


অখিলেশের আগে দলের সাংসদ রামগোপাল বর্মা, জয়া বচ্চনও হতাহতের সংখ্যা লুকনোর অভিযোগ তুলেছেন। রামগোপালের দাবি, ১৫০০০ মানুষের পরিবারের লোকজন নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন। অথচ সরকার কোনও তথ্য দিচ্ছে না। জয়ার বক্তব্য, “এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দূষিত জল কোথায়? কুম্ভে। পদপিষ্ট হয়ে যাঁরা মারা যান, তাঁদের দেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে জল দূষিত হয়ে গিয়েছে। আসল বিষয়ে কোনও চর্চা নেই।” মহাকুম্ভের বিপর্যয়ে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা হচ্ছে বলে একযোগে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। সোমবার সেই নিয়ে সংসদে প্রতিবাদও জানান তাঁরা। মহাকুম্ভের বিপর্যয় নিয়ে আলোচনার দাবি তোলেন।