লখনউ: দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়মিত ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের খবর উঠে আসছে। নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ যে হারে বেড়ে চলেছে, তাতে বিচারব্যবস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। আর সেই আবহেই এলাহাবাদ হাইকোর্টের মন্তব্য নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হল। সেখানে নাবালিকার উপর নির্যাতনের মামলার শুনানি চলাকালীন আদালত জানায়, নির্যাতিতার স্তন মুচড়ে দেওয়া বা পাজামার দড়ি ধরে টানা কখনও ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা বলে গণ্য হতে পারে না। এই ধরনের আচরণকে যৌন নির্যাতন বলা চলে বলে জানাল আদালত। (Allahabad High Court)
২০২১ সালে উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জে ১১ বছরের এক বালিকার উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বালিকার উপর নির্যাতন চালানো হয় বলে দায়ের হয় অভিযোগ। জানা যায়, পবন এবং আকাশ নামের দুই যুবক মেয়েটির স্তন মুচড়ে দেয়। মেয়েটি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে তার পাজামার দড়ি ছিঁড়ে দেয় অভিযুক্তরা। এরর পর মেয়েটিকে টেনে হিঁচড়ে তারা সাঁকোর নীচে যাওয়ার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ। স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয়। (POCSO Case)
সেই মামলায় প্রথমে পবন এবং আকাশের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়। কাসগঞ্জ ট্রায়াল কোর্টের নির্দেশে মামলা দায়ের হয় POCSO আইনের ১৮ নম্বর ধারাতেও। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রের বেঞ্চ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৫৪-বি (জোরপূর্বক বিবস্ত্র করার চেষ্টা) এবং POCSO আইনের ৯/১০ ধারায় (যৌন নির্যাতন) মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
লঘু আইনে মামলা দায়ের করা হবে কেন প্রশ্ন উঠলে আদালত বলে, "অভিযুক্ত পবন এবং আকাশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এবং বাস্তবে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা খাটে না। ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করতে গেলে সরকারি কৌঁসুলিকে প্রমাণ দিতে হবে, যে ধর্ষণের দিকেই এগোচ্ছিল ঘটনা। অপরাধ ঘটানোর প্রস্তুতি এবং প্রকৃত প্রচেষ্টার পার্থক্য রয়েছে, যা বৃহত্তর সঙ্কল্পের মধ্যে নিহিত।"
অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের আইনজীবী যুক্তি দেন, ট্রায়াল কোর্টে চার্জগঠনের ক্ষেত্রে তদন্তে প্রাপ্ত প্রমাণপত্র খতিয়ে দেখার কথা নয় ট্রায়াল কোর্টের। অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে প্রাথমিক একটি মামলা দায়ের করলেই হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে আদালত বলে, "অভিযুক্তদের কারণেই নির্যাতিতাকে নগ্ন হতে হয় বা তাঁর পোশাক খুলে যায় বলে সাক্ষীদের কেউই জানাননি। অভিযুক্তরা অন্তর্স্পর্শী যৌন অপরাধ ঘটাতে যাচ্ছিলেন বলেও নেই অভিযোগ।"
মামলার শুনানি চলাকালীন আদালত আরও জানায় যে, অভিযুক্তরা নির্যাতিতাকে ধর্ষণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল বলে ধারণা মেলে না রেকর্ডে থাকা তথ্য় থেকে। আকাশের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ভাবে যে অভিযোগ রয়েছে, তা হল, সে নির্যাতিতাকে সাঁকোর নীচে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল এবং তার পাজামার দড়ি ছিঁড়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই কারণেই নির্যাতিতা নগ্ন হয়ে যায় বা তার পোশাক খুলে যায় বলে জানাননি সাক্ষীদের কেউ। নির্যাতিতার উপর অন্তর্স্পর্শী যৌন নির্যাতন চালানোর চেষ্টা হচ্ছিল বলে নেই কোনও অভিযোগ।"
এই ঘটনায় অশোক নামের তৃতীয় আর এক যুবকের নামও উঠে এসেছে, যে কি না অভিযুক্ত পবনের বাবা। অভিযোগ, ছেলের কীর্তির কথা জানাতে গেলে অশোক নির্যাতিতাকে হুমকিয়ে দেয়, তার সঙ্গে অভব্য আচরণ করে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ এবং ৫০৬ ধারায় অশোককে তলব করা হয়।