নয়াদিল্লি: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ নিয়ে এবার বিতর্কে বিজেপি-র তারকা সাংসদ হেমা মালিনী। তিনি 'বেআইনি' ভাবে মন্দিরে প্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের হল মথুরার বিজেপি সাংসদ হেমার বিরুদ্ধে। এবছর দোলযাত্রা উদযাপনের জন্য ওড়িশাকেই বেছে নেন হেমা। পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ দর্শনেও যান। সেই নিয়েই জোর বিতর্ক বিজেপি শাসিত ওড়িশায়। (Hema Malini)


জগন্নাথ ধামে এবছর দোল উদযাপন করেন হেমা। বিজেপি-র সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্রর সঙ্গে পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ দর্শনে যান তিনি। সেখানে রং বা আবিরের পরিবর্তে ফুল ছড়িয়ে দোল খেলেন হেমা। সেই নিয়েই সিংহদ্বার থানায় নায়িকা-সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। স্থানীয় সংগঠন 'শ্রী জগন্নাথ সেনা' হেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। 'বেআইনি' ভাবে মন্দিরে প্রবেশ করে হেমা জগন্নাথ ভক্তদের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত হেনেছেন, ধর্মীয় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ। (Hema Malini Jagannath Temple Visit Row)


ভিনধর্মী হেমা মন্দিরে প্রবেশ করে নিয়ম ভেঙেছেন বলে অভিযোগ করেছে 'শ্রী জগন্নাথ সেনা'। সংস্থার প্রধান প্রিয়দর্শন পট্টনায়েকের যুক্তি, অভিনেতা ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে করতে ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন হেমা। বিবাহিত ধর্মেন্দ্র দ্বিতীয় বার হেমাকে বিয়ে করেত ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা দু'জন নামও পাল্টেছিলেন। বিয়েও হয় ইসলামি রীতি মেনে। সেই হেমা পুরীর মন্দিরে ঢুকে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার পাশাপাশি, বিধি লঙ্ঘন করেছেন। 



সংবাদমাধ্যমে প্রিয়দর্শন বলেন, "দর্শন করে চলেও গেলেন। অথচ কেউ বুঝতে পারলেন না, উনি মুসলিম। কোনও ধর্মের প্রতি উষ্মা নেই আমাদের। সব ধর্মকে সম্মান করি আমরা। কিন্তু মক্কা-মদিনায় যেমন হিন্দুরা যেতে পারেন না, তেমনই জগন্নাথ মন্দিরে হিন্দু ছাড়া অন্যদের প্রবেশের অনুমতি নেই।" পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরই প্রবেশের অধিকার রয়েছে বলে জানান তিনি। 


ধর্মেন্দ্র এবং হেমার বিয়ের খুঁটিনাটিও তুলে ধরেন প্রিয়দর্শন। তিনি জানান, ১৯৭৯ সালের ২১ অগাস্ট ধর্মেন্দ্র এবং হেমা বিয়ে সারেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রী, চার সন্তান থাকা সত্ত্বেও হেমাকে বিয়ে করতে ইসলাম গ্রহণ করেন ধর্মেন্দ্র। তাঁর নাম হয় দিলাওয়ার খান কেবল কৃষ্ণ, হেমার নাম হয় আয়েশা বিবি আর চক্রবর্তী। ১ লক্ষ ১১ হাজার মেহর নিয়ে তাঁদের বিয়ে দেন মৌলানা কাজি আবদুল্লা ফয়জাবাদী। পরবর্তীতে হেমা নিজ ধর্মে ফিরে এসেছিলেন বলেও জানা নেই। তাই ইসলাম গ্রহণকারী হেমা পুরীর মন্দিরে প্রবেশ করে বিধি ভেঙেছেন, তাঁকে গ্রেফতার করা উচিত বলে দাবি করেছেন প্রিয়দর্শন। যে বা যাঁরা হেমাকে মন্দিরে নিয়ে যান, তাঁদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন তিনি।



বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি হেমা। তবে আগেও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু জগন্নাথ মন্দিরে তাঁর প্রবেশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুরীর জেলাশাসক সিদ্ধার্থশঙ্কর সোয়াইন বলেন, "জগন্নাথ মন্দিরের বিশেষ কিছু নিয়ম এবং বিধিনিষেধ রয়েছে। এই ঘটনার পর হেমা ব্যক্তিগত ভাবে মন্দির কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠান এবং কৈফেয়ত দেন। হেমা জানিয়েছেন, জন্মসূত্রে তিনি হিন্দু এবং সনাতন ধর্মের রীতিনীতিই পালন করেন। নির্বাচনী হলফনামাতেও তাঁর নাম হেমা ধর্মেন্দ্র দেওল লেখা রচেছে। এই প্রথম জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ নয় তাঁর। গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রর সঙ্গে আগেও সেখানে গিয়েছেন।"