গওহরের পরিবারের ৯ সদস্য়ের মধ্যে চারজনই বাক ও শ্রবণশক্তিহীন।
মণি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, কয়েকবার এমনিই দেখা-সাক্ষাত্ হওয়ার পর একদিন আমার সঙ্গে আমাদের ক্যাম্পে আসে ও। ওকে একজোড়া জুতো উপহার দিই। পরদিনই ও আমার জন্য এক ক্রেট আপেল নিয়ে ক্য়াম্পে হাজির! আমি তখন ছিলাম না। কিন্তু ফিরতেই ছুটে আসে। কিছু খেতে দিই। সেটা নেয়। পরে একদিন ওর পরিবারের সঙ্গে দেখা করি। সিদ্ধান্ত নিই, ওর পড়াশোনার ভার নেব। পরিবারটি প্রথমে দ্বিধা করলেও একজন সাহায্য করতে চায় জেনে খুবই খুশি হয়। গওহর আগে বারামুল্লার একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, কিন্তু সেখানে শিক্ষকরা মারধর করতেন বলে যেতে চাইত না বলে জানিয়েছেন মেজর। তিনি এখন গওহরকে হান্ডওয়ারার একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন, যেখানে ওর মতো বিশেষ প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য আলাদা শিক্ষক আছেন। ওর বইখাতা, ইউনিফর্ম, টিউশনের খরচ দিয়েছেন। গওহর এখন পড়ছে ক্লাস নাইনে।
তাঁর সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখার জন্য গওহরকে একটা স্মার্টফোনও কিনে দিয়েছেন মেজর। বলেছেন, চিকিত্সার জন্য় যেখানে দরকার, ওকে নিয়ে যেতে ওর পরিবার আমায় সম্মতি দিয়েছে। ও ৭০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। কথা বলা, কানে শোনার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার আশা খুবই কম। কিন্তু দিল্লি গেলে ওকে চেক আপের জন্য নিয়ে যাব বলেছি।
গওহর যে গ্রামের ছেলে, গত মে মাসেই সেখানে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে এনকাউন্টারে নিহত হন এক কর্নেল, এক মেজর ও তিন নিরাপত্তা জওয়ান। খতম হয় দুই সন্ত্রাসবাদীও। কিন্তু যে কাশ্মীরে সেনা ও নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পর্ক সহজ, মসৃণ নয় বলে শোনা যায়। কিন্তু মেজর জানাচ্ছেন, এই সম্পর্কে কোনও দ্বিধা-সংকোচ, ভয়-ভীতির লেশমাত্র নেই। চাঞ্জমুল্লার মানুষজনের মানসিকতা সহযোগিতার। তাঁর এই প্রয়াস ‘এক ক্ষুদ্র পদক্ষেপ যা স্থানীয়দের মনোভাব বদলাবে বলে আমার আশা’, বলেন মেজর।
মেজর মণি ২০১৩-র ডিসেম্বরে কমিশনড হন। তিনি ২১ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সঙ্গে চাঞ্জমুল্লায় আছেন বছরখানেক। বেঙ্গালুরুর মিলিটারি স্কুলের ছাত্র, পরে পুণের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতেও ট্রেনিং নিয়েছেন। ২০১৩-য় তাঁকে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্য়াকাডেমিতে রাষ্ট্রপতির গোল্ড মেডেল পান, যা তিনি নিজের স্কুলকেই শ্রদ্ধার স্মারক হিসাবে উত্সর্গ করেন।