পটনা: 'পল্টুরাম' উপমা সার্থক করে আবারও শিবির বদলালেন নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A শিবিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে, সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে হাত মেলালেন বিজেপি-র সঙ্গে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA শিবিরে যোগ দিলেন। সেই নিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহল। নীতীশ যে এমন করবেন, তা আগে থেকেই জানা ছিল বলে দাবি বিজেপি বিরোধী শিবিরের। আবার বিজেপি-র অন্দর থেকেও নীতীশকে কটাক্ষ করেছেন কেউ কেউ। (Politicians React on Nitish)
নীতীশ নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পরই মুখ খোলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। তিনি বলেন, "আগে উনি এবং আমরা একসঙ্গে লড়াই করতাম। লালুজি এবং তেজস্বীর সঙ্গে যখন কথা হল, ওঁরাও বললেন, নীতীশ চলে যাচ্ছেন। থাকার হলে উনি থেকে যেতেন। আমরা জানতামই। কিন্তু I.N.D.I.A জোটকে ধরে রাখতে ভুল বার্তা দিতে চাইনি। লালুপ্রসাদ যাদব এবং তেজস্বী যাদব আগেই জানিয়েছিলেন। তাঁদের কথাই সত্যি হল। দেশে এমন আয়ারাম, গয়ারাম রয়েছেন অনেকে।"
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'নীতীশ কুমার হামেশাই রাজনৈতিক সঙ্গী বদলান। রং বদলানোর ক্ষেত্রে গিরগিটিকেও টেক্কা দিচ্ছেন উনি। এই বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করবেন না বিহারের মানুষজন। যাঁরা আগুবের ডগায় নাচিয়েছেন, তাঁদের ভুলবেন না। বোঝাই যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা দেখে ভয় পেয়েছেন। নজর ঘোরাতে এই রাজনৈতিক চিত্রনাট্য বুনেছেন'।
লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদবের বক্তব্য, "জোটধর্ম পালন করতে সংযমী ছিলাম আমরা। একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিই, খেলা সবে শুরু হয়েছে। এখনও বাকি আছে খেলা। আপনারা লিখে নিন, ২০২৪ সালেই সংযুক্ত জনতা দলটি উঠে যাবে।"
নীতীশকে নিয়ে এদিন মুখ খোলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরও। তাঁর কথায়, "আমি তো গোড়া থেকেই বলে আসছি, যে কোনও সময় ডিগবাজি খেতে পারেন নীতীশ কুমার। শিবির বদলানো ওঁর রাজনৈতিক পরিচয় হয়ে উঠেছে। উনি পল্টুমার। তবে এতে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হল যে, শুধু নীতীশ কুমার নন, বিজেপি-র সব নেতাও পল্টুমার। এতদিন নীতীশকে কাঠগড়ায় তুলছিলেন ওঁরা। এখন আবার বুকে টেনে নিলেন।"
বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, "যাঁরা বিজেপির সঙ্গে যাচ্ছেন, মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করছেন।" কংগ্রেসের পবন খেরা বলেন, "নবম বারের জন্য শপথ নিচ্ছেন। বিবেকবোধ নিশ্চয়ই ঢের আগেই বিসর্জন দিয়েছেন। উনি যা ইচ্ছা বলতে পারেন। ভাল কাজের জন্য ইতিসা নাম উঠতে পারত ওঁর। কিন্তু নিজে এই পরিস্থিতি ডেকে এনেছেন। ঘরে ঘরে ওঁকে নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে। উনি হাসির পাত্র হতে চাইছেন, সম্পূর্ণ ওঁর একার সিদ্ধান্ত।"
AIMIM নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেন, "নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচিত বিহারবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া। বিহারের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ওঁরা। বিশেষ করে নীতীশ কুমার। রাজনৈতিক সুবিধাবাধী বললেও কম বলা হয়। সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন উনি। আমি গোড়া থেকে বলে আসছি, নীতীশ বিজেপি-রই হাত ধরবেন। তেজস্বীকে প্রশ্ন করতে চাই, এখন কেমন অনুভূতি হচ্ছে? আমাদের চার বিধায়ককে ভাঙিয়ে নিয়েছিলেন। সেই যন্ত্রণা বুঝতে পারছেন তো? বিহারে নীতীশ কুমার বিজেপি এবং আরএসএস-এর মুখ হয়েই থাকবেন শুধু। যতদিন বাঁচবেন, মুখ্যমন্ত্রী থাকতে চান নীতীশ আর বিজেপি যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় থাকতে চায়।"
আগের বার জোট ভেঙে বেরিয়ে নীতীশ বেরিয়ে এলে, আর তাঁকে ফেরত নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এদিন নীতীশকে স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রের বিজেপি নেতারা। যদিও বাংলার বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের গলায় কটাক্ষ শোনা গিয়েছে। নীতীশকে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "নীতীশের অভ্যাস আছে, প্রতি ২ বছরে একবার করে শপথগ্রহণ করেন। একবার ভোটে জিতে তিনবার-চারবার শপথগ্রহণ করতে হয়। এরকম রাজনীতি দেশে বন্ধ হওয়া দরকার।"