নয়াদিল্লি: আরও ১০ বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে ভারত ও ইরানের মধ্যে। চুক্তির আওতায় আরও এক দশক চবাহার বন্দরটি পরিচালনা করতে পারবে ভারত, যা ভূরাজনৈতিক এবং কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই নিয়ে এবার ভারতকে চোখ রাঙানি আমেরিকার। ভারত ও ইরানের মধ্যে আর ও১০ বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরই সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন আমেরিকার বিদেশমন্ত্রকের ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত পটেল। তিনি জানান, ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি রয়েছে, সব পক্ষেরই সেটা মাথায় রাখা উচিত। (Chabahar Port Deal)


চবাহার বন্দরকে ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারেও নেতিবাচক মন্তব্য করেন বেদান্ত। তিনি জানান, ভারতের বিজেশ মন্ত্রকের তরফে এ নিয়ে কোনও বার্তা আসেনি বলে জানান তিনি। তবে তাঁর এই মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, "কিছু মন্তব্য করা হয়েছে বলে শুনলাম। এর সঙ্গে আলোচনার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। বোঝাপড়ার বিষয় রয়েছে, যা সব পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক। বিষয়টি নিয়ে সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত নয়। আগে এমনটা ঘটেনি। চবাহার বন্দরের গুরুত্ব বুঝেই আগে আমেরিকা বিষয়টি নিয়ে উৎসাহিতই ছিল।" (US Sanction Warning)


ইরানের চবাহার বন্দর নিয়ে এর আগে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড়পত্রই মিলেছিল। আমেরিকার তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার ছাড়পত্র দিয়েছিল। নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি নিয়ে আগামী দিনে কূটনীতিকরা আলোচনায় বসবেন বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু আমেরিকার বিদেশ দফতরের ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত যে বার্তা দিয়েছেন, তা এই মুহূর্তে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


আরও পড়ুন: North Korea News: লাল রঙে রাঙানো যাবে না ঠোঁট, উত্তর কোরিয়ায় এবার লিপস্টিকে খাঁড়া নামল


কারণ চবাহার বন্দর নিয়ে বেদান্ত আরও বলেন, "চবাহার বন্দর নিয়ে ইরান এবং ভারতের চুক্তি সম্পর্কে অবগত আমরা। চবাহার বন্দর হোক বা ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা, ভারত সরকার নিজের বিদেশনীতি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানাবে। আমি শুধু এইটুকুই বলব, ইরানের উপর আমেরিকা যে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, তা আজও বহাল রয়েছে এবং আগামী দিনেও থাকবে। আমরা বার বার বলেছি, যে-ই হোক না কেন, ইরানের সঙ্গে ব্য়বসায়িক চুক্তির অর্থ তাদের উপরও নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া নেমে আসতে পারে।"


ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশে গভীর সমুদ্রের উপর তৈরি বন্দর চবাহার। ভারতের সবচেয়ে নিকটতম ইরানীয় বন্দর এটি। বৃহদাকার মালবাহী জাহাজ সহজেই ঢুকতে পারে বন্দরে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইরান সফরে দিয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চবাহার বন্দরকে যাতে আন্তর্জাতিক পরিবহণ করিডর হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত, ইরান এবং আফগানিস্তান।  চবাহার বন্দরের শহিদ বেহেস্তি টার্মিনালটির উন্নয়নের কাজে হাত দিয়েছে ভারত। 


এখনও পর্যন্ত সেখানে দু'টি ১৪০ টন এবং চারটি ১০০ টন ওজনের মোবাইল ক্রেন সরবরাহ করেছে ভারত। পাশাপাশি, ২.৫ কোটি ডলার মূল্যের সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর চবাহার বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পায় India Global Limited-এর ভর্তুকিপ্রাপ্ত সংস্থা India Ports Global Chabahar Free Zone.  সেই থেকে এখনও পর্যন্ত ৯০ হাজারের বেশি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেনার এবং 84 লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি ওজনের সাধারণ মালাহী জাহাজ বন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছে। করোনার সময় ওই বন্দরের মাধ্যমেই মানবিক সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া হয় বিভিন্ন দেশে। চবাহার বন্দরের মাধ্যমেই ২৫ লক্ষ টন গম, ২০০০ টন ডাল আফগানিস্তানে পৌঁছে দিয়েছে ভারত। পঙ্গপালের হানা রুখতে ২০২১ সালে  চবাহার বন্দরের মাধ্যমেই ইরানকে ৪০ হাজার লিটার পরিবেশ বান্ধব কীটনাশক পৌঁছে দেয় ভারত।