নয়াদিল্লি: একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। অথচ লোকসভায় সেই নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না রেলমন্ত্রী অশ্বিমী বৈষ্ণব। বরং লোকসভায় বলতে উঠে বন্দেভারত-বন্দনা শোনা গেল তাঁর মুখে। বুলেট ট্রেন প্রযুক্তির ঢালাও প্রশংসা করলেন। বন্দেভারত এবং বুলেট ট্রেনের কৃতিত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। সেই নিয়ে তুলকালাম বাধল। অশ্বিনীর বিরুদ্ধে একযোগে সরব হলেন বিরোধীরা। (Ashwini Vaishnaw)


বুধবার লোকসভায় অশ্বিনী বলেন রেলের আধুনিকীকরণ নিয়ে  কথা বলেন অশ্বিনী। তিনি জানান, বুলেট ট্রেনের নকশা অত্যন্ত জটিল। একটি মাত্র গার্ডার ৪০ মিটার। সেটি তুলতে ক্রেনের প্রয়োজন পড়ে।  অত্যন্ত সন্তুষ্টির সঙ্গে সরকার আজ বলতে পারে যে ওই ক্রেন ভারতে তৈরি হচ্ছে এখন। বুলেট ট্রেনের সম্পূর্ণ প্রযুক্তি আত্মস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে রেল প্রযুক্তিতে ভারত আত্মনির্ভর হতে পারে। সরকারের ফোকাস এখন পুরোপুরি সেদিকে বলে জানান তিনি। (Lok Sabha)


তবে সেখানেই থামেননি অশ্বিনী। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের গৌরবকে বন্দেবারতের মাধ্যমে আরও গৌরবশালী জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আত্মনির্ভর হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় দেশীয় প্রযুক্তিতে বন্দে ভারতকে উন্নত করাে তোলা হচ্ছে। ভারতকে আত্মনির্ভর হওয়ার রাস্তা দেখিয়েছেন উনি।"


অশ্বিনীর এই মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিরোধীরা। জানান, 'হায় হায়' রব তোলেন তাঁরা। পর পর রেল দুর্ঘটনা ঘটলেও দায়স্বীকার তো দূর, রেলমন্ত্রী কেন সেই নিয়ে কথা বলছেন না, প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। তা সত্ত্বেও কোনও প্রতিক্রিয়া না মেলায় অশ্বিনীর ভাষণ চলাকালীন লাগাতার স্লোগান ভেসে আসতে থাকে বিরোধীদের তরফে। যদিও দুই মাসে চার-চারটি ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি অশ্বিনী।


এ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন। তাঁর কথায়, "প্রচারসর্বস্ব, পাবলিটি মাস্টার প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রীসভার সদস্য এই রেলমন্ত্রী। নির্লজ্জতম, অপদার্থ এবং ব্যর্থতম রেলমন্ত্রী উনি। দুর্ঘটনার পর শুধু গিয়ে ছবি তুলতে থাকেন। তাঁর আমলে পর পর রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, এত মানুষ মারা গিয়েছেন। রেলটাকে রসাতলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অথচ ৮৫ লক্ষ পদ খালি, ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, প্রবীণদের ছাড় তুলে দেওয়া হয়েছে, বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে রেলের। রেল নিয়ে মাথাব্যথা নেই। যাত্রীরা বাঁচল, না মরল, কোনও ভাবনা নেই বলেই এসব বলে ঢাক পেটাচ্ছেন। অবিলম্বে দায়স্বীকার করে পদত্যাগ করা উচিত ওঁর।"


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় আপ্লুত রেলমন্ত্রী। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে, মৃত্যুমিছিল চলছে, তার কোনও দায় নেই সরকারের। সরকার নিজেদের পিঠ চুলকাতে ব্যস্ত। বন্দেভারতের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর। কারণ প্রধানমন্ত্রী রেলমন্ত্রীকে দুর্ঘটনা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করে বারণ করে দিয়েছেন। এত মানুষের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন রেলে বিনিয়োগ বেড়েছে আটগুণ, যা তথ্যভিত্তিক নয়। অর্থাৎ কে মারা গেল, না গেল কিছু যায় আসে না। প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা এত বেড়ে গিয়েছে যে মানুষের মৃত্যুর কোনও দাম নেই।"


বুধবার রাঙাপানিতে ফের একটি মালগাড়ি লাইনচ্যুত হয়েছে। এই নিয়ে গত দুই মাসে চারটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটল। আর গত এক বছরের নিরিখে পর পর দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে  একের পর এক ট্রেন। ২০২৩ সালের ২ জুন বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ২৯৬ জনের মৃত্যু হয়। এর পর, ২৬ অগাস্ট মাদুরাইয়ে ট্রেনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে ৪ জন মারা যান। ১১ অক্টোবর বিহারের বক্সারে দিল্লি-কামাখ্যা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পাঁচ জন মারা যান, আহত হন ৩০ জন। ২৯ অক্টোবর বিশাখাপত্তনমে দুই প্যাসেঞ্জার ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ১৩ জন মারা যান ওই দুর্ঘটনায়। আহত হন ৫০ জন। এবছর ১৭ জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ১০ জন মারা যান। ১৮ জুলাই চণ্ডীগড়-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় তিন জন, ৩০ জুলাই হাওড়া-মুম্বই মেল দুর্ঘটনায় দু'জন মারা যান। আজ ফের রাঙাপানিতে লাইনচ্যুত হয় মালগাড়ি।