নয়াদিল্লি: অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে সাজ সাজ রব। মন্দিরের মূল ফটক থেকে গর্ভগৃহ, এক ঝলক দেখেই চমকে গিয়েছেন সকলে। মন্দিরের ভাস্কর্য যেমন নজর কেড়েছে, তেমনই 'রামলালা' অর্থাৎ রামচন্দ্রের শিশুকালের মূর্তিও প্রশংসা কুড়িয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে শুধুমাত্র চটকদারি নয়, ঝড়-জল, ভূমিকম্প সইতেও অযোধ্যার এই রামমন্দির সক্ষম বলে জানিয়েছে শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র। তাদের দাবি, বিশেষ কৌশলে এই মন্দিরের নির্মাণ হয়েছে, যাতে হাজার বছরেরও বেশি সময় টিকে থাকতে পারে। (Ayodhya Ram Mandir)
শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র সংগঠনই অযোধ্যার রামমন্দিরের নির্মাণের দায়িত্বে। সংগঠনের চেয়ারপার্সন শ্রী নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, "১ হাজার বছর টিকতে পারে যাতে, সেই কৌশলেই মন্দিরটির নির্মাণ হয়েছে।" তিনি জানিয়েছেন, মন্দির নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে বিজ্ঞানের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। মন্দির নির্মাণে দেশের তাবড় বিজ্ঞানীদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র প্রযুক্তিরও ব্যবহারও করে হয়েছে। (Ayodhya Ram Temple)
জানা গিয়েছে, উত্তর ভারতের নগর স্থাপত্য শৈলী অনুযায়ীই অযোধ্যার রামমন্দিরটির নির্মাণ হয়েছে। চন্দ্রকান্ত সোমপুরা মন্দিরের নকশা তৈরি করেছেন। বিগত ১৫ প্রজন্ম ধরে তাঁর পরিবার মন্দির নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত। দেশে ১০০টিরও বেশি মন্দিরের নকশা তৈরি করেছে তাঁর পরিবার। সোমপুরা জানিয়েছেন, রামমন্দিরের এই স্থাপত্য অত্যন্ত বিরল। ভারতে তো বটেই, গোটা পৃথিবীতে এমন সৃষ্টি আর নেই তেমন।
২.৭ একর জায়গা জুড়ে অযোধ্যার রামমন্দিরের বিস্তার। মূল মন্দিরের আয়তনই ৫৭ হাজার স্কোয়্যার ফুট। তিনটি তলে বিভক্ত মন্দিরটি। তবে মন্দিরের নির্মাণে লোহা বা স্টিল ব্যবহার করা হয়নি। এর নেপথ্য কারণ খোলসা করতে গিয়ে শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র জানিয়েছে, লোহার আয়ু ৮০ থেকে ৯০ বছর। মন্দিরের উচ্চতা ১৬১ ফুট। মন্দির তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রানাইট, চুনাপাথর, শ্বেতপাথর। মন্দির তৈরিতে ব্যবহার করা হয়নি সিমেন্টও।
সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, রুরকির ডিরেক্টর প্রদীপকুমার রামচন্দ্র জানিয়েছেন, 'লক অ্যান্ড কি' পদ্ধতিতে মন্দিরটির নির্মাণ হয়েছে, অর্থাৎ একটি পাথরের কিনারাকে অন্য পাথরের খাঁজের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মন্দির। তিনি এই নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আগামী ২৫০০ বছর হেসেখেলে দাঁড়িয়ে থাকবে মন্দিরটি, ভূমিকম্পও একচুল টলাতে পারবে না বলে দাবি সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের।
সরযূপাড়ের ওই এলাকার মাটি বালুকাময় এবং অস্থির তাই মন্দির নির্মাণের প্রাথমিক ধাপে বাধা পেতে হয়। কিন্তু তারও সমাধান বের করা হয়। মন্দিরস্থলে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরের মাটি প্রথমে খুঁড়ে তুলে ফেলা হয়। সেই জায়গা ভরাট করা হয় ইঞ্জিনিয়ার্ড মাটি দিয়ে, যা বালি, পলি, মাটির সঙ্গে জৈব পদার্থের মিশ্রণ। স্টিলের রড ব্যবহার করা হয়নি। তার পরিবর্তে বরং ৪৭টি স্তরে ভরাট করা হয় মাটি, যাতে পাথরের মতো মজুত হয় ভিত। তার উপর ১.৫ মিটার পুরু M-35 গ্রেডের অধাতব কংগ্রিটের স্তরও গড়ে তোলা হয়। তার উপর আবার চাপানো হয় ৬.৩ মিটার পুরু গ্রানাইট পাথর। মন্দিরগাত্রে ব্যবহার করা হয়েছে রাজস্থান থেকে আনা গোলাপি চুনাপাথর। মন্দিরের নিচের তলায় ১৬০টি, তার উপরের তলায় ১৩২টি এবং তিন তলায় ৭৪টি স্তম্ভ ব্যবহৃত হয়েছে, যার সবক'টিই চুনাপাথরে তৈরি। মন্দিরের গর্ভগৃহে মাকারানা মার্বেল ব্যবহৃত হয়েছে, যা আনা হয় রাজস্থান থেকে। তাজমহলও মাকারানা মার্বেলে তৈরি করা হয়েছিল।