কলকাতা: যে অনুষ্ঠান নিয়ে অপেক্ষা ছিল গোটা দেশের। যে মূর্তি নিয়ে ভাবনা ছিল অপার। সে মূর্তি নিয়ে নিরলস অধ্যাবসায় করেছিলেন বিশিষ্ট ভাস্কর অরুণ যোগীরাজ নিজেও। আর সেই মূর্তি যখন রামমন্দির উদ্বোধনের পর প্রকাশ্যে এল, দেখা যায়, এক নয়নাভিরাম মূর্তি। রামলালার মুখে এক প্রশান্তির হাসি, চোখ যেন মায়াময়। 


রামলালাকে কেমন দেখতে হবে তা নিয়ে কয়েক মাস ভাবনা চিন্তা করেছিলেন অরুণ যোগীরাজ। কিন্তু এমন মায়াবী চোখের কী রহস্য? এ প্রশ্ন ছিল সকলেরই। এবার সেই রহস্যরই সমাধান করলেন শিল্পী নিজেই। 


এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেছেন শিল্পী। সেখানে তিনি বলেছিলেন রামলালার মূর্তি তৈরিতে তিনি বিশেষ কয়েকটি জিনিস ব্যবহার করেছেন। বিগ্রহের চোখ খোদাই করতে তিনি ব্যবহার করেছেন সোনার ছেনি ও রুপোর হাতুড়ি। রামলালার অভিষেকের ১৯ দিন পর সেই হাতুড়ি ও ছেনির ছবি প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি। 


রামলালার ভাস্কর্য বিবরণ


বেদির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন রামলালা। মুখে তাঁর স্মিত হাসি। কপালে তিলক এবং হাতে  তির-ধনুক। মূর্তিটি ৫১ ইঞ্চি লম্বা, চওড়া ৩ ফুট। ওজন প্রায় ২০০ কেজি। ভগবান রামকে দাঁড়িয়ে থাকা ভঙ্গিতে পাঁচ বছরের শিশু হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। কালো পাথরের তৈরি এই মূর্তিটি তৈরি করেছেন মাইসোরের শিল্পী অরুণ যোগীরাজ। মূর্তির চালচিত্রে রয়েছে বিষ্ণুর দশাবতার- মৎস্য, কুর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ ও কল্কি। মূর্তির একদিকে হনুমান ও অপর দিকে গরুড়। শুধু তাই নয়, মূর্তির যে মুকুট রয়েছে তাতে সূর্য, শঙ্খ, স্বস্তিক, চক্র ও গদা রাখা হয়েছে। 






মূর্তির প্রধান বিশেষত্ব হল, একটি কৃষ্ণশিলা দিয়েই এটি গড়া হয়েছে। সূত্রের খবর, রাম মন্দিরের জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষ তিনটি মূর্তি তৈরির বরাত দিয়েছিল। মূর্তি তৈরির জন্য নেপাল থেকে শালগ্রাম শিলা আনা হয়েছিল। কিন্তু তা মূর্তি তৈরিতে কাজে লাগেনি। কারণ, খোদাইয়ের সময় বারবার সেই পাথর ভেঙে যাচ্ছিল। পরে ঠিক হয় কালো পাথরের মূর্তি তৈরি হবে।
রাম মন্দিরে রাখার জন্য ৩টি মূর্তির মধ্যে থেকে এটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। বাকি দু'টি বিগ্রহ মন্দিরের অন্যত্র স্থান পাবে। যে বেদিতে রামলালা থাকবেন, সেটি ৩.৪ ফুট উঁচু। তৈরি মাকরানা পাথর দিয়ে।  


অরুণ-পরিচয়


অরুণ যোগীরাজ কর্ণাটকের মহীশূর শহরের বাসিন্দা। তিনি বিখ্যাত ভাস্করদের একটি পরিবার থেকে এসেছেন। তার পাঁচ প্রজন্ম মূর্তি খোদাইয়ের কাজ করে আসছে। অরুণ দেশের অন্যতম বিখ্যাত ভাস্কর। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অরুণের খোদাই করা মূর্তির চাহিদা রয়েছে। অরুণের প্রতিভার প্রশংসা করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 


 


আরও পড়ুন, চাকরি ছেড়ে ধ্যানজ্ঞান ভাস্কর্য, MBA পাস করা অরুণ যোগীরাজের তৈরি রামলালার মূর্তিতেই প্রাণপ্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত