নয়াদিল্লি: অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন ঘিরে সাজ সাজ রব। সেই আবহেই রাজনৈতিক তরজা জারি। তামিলনাড়ুতে রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নোটিসও ধরিয়েছে তামিলনাড়ুর এমকে স্ট্যালিন সরকারকে। কিন্তু রামমন্দির উদ্বোধনের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করার অভিযোগ সঠিক নয়, কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি বলে জানাল তারা। (Ayodhya Ram Mandir)
তামিলনাড়ুতে অযোধ্যা থেকে সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে দাবি করেন সীতারামন। এর পর শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় সেই নিয়ে, তাতে তামিলনাড়ু সরকারকে সোমবার নোটিস ধরিয়েছে শীর্ষ আদালত। রামমন্দিরের উদ্বোধন, পুজো-অর্চনার সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করা যাবে না বলে জানানো হয় তাতে। এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়ে থাকলে, তার কারণ জানাতেও বলা হয় তামিলনাড়ু সরকারকে। (Ayodhya Ram Mandir Inauguration)
সোমবার শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। জরুরি ভিত্তিতে সেটি শুনানির জন্য ওঠে বেঞ্চে, তাতে অভিযোগ করা হয়, মৌখিক ভাবে তামিলনাড়ুতে রামমন্দির থেকে সরাসরি সম্প্রচার, বিশেষ পুজো, অর্চনা, ভজনের আয়োজন করতে বারণ করা হয়েছে। রিলায়্যান্সের তরফে সেই নিয়ে কিছু নথিপত্রও তুলে ধরা হয় শীর্ষ আদালতে। আবেদনকারীর আইনজীবী দামা শেষাদ্রি নায়ডু আদালতে বলেন, "একটি রাজনৈতিক দল ধর্মকে ঘৃণা করে। ক্ষমতায় এসে সেই দল চাইছে, সরকারও ধর্মকে ঘৃণা করুক।"
বিচারপতি খান্না এর পর জানান, যদি মৌখিক ভাবে এমন কোনও নির্দেশ দেওয়াও হয়ে থাকে, তা সরকারি নির্দেশ বলে ধরা হয় না। তা মেনে চলার বাধ্যবাধকতাও নেই। এর পর সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, মন্দিরে বসানো LED স্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু থানা থেকেও সেই মর্মে নির্দেশ গিয়েছে। এ নিয়ে শীর্ষ আদালতের তরফে কড়া নির্দেশ যাওয়া উচিত। তাতে বিচারপতি খান্না জানান, এটা সাধারণ নির্দেশ। কেউ অনুমতি চাইলে বা আবেদন জানালে, আইন অনুযায়ীই পদক্ষেপ করা উচিত।
এর পর বিচারপতি দত্ত সরাসরি তামিলনাড়ু সরকারকে প্রশ্ন করেন। রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভকেট জেনারেলের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন ছোড়েন, এলাকায় সংখ্যালঘুদের বাস রয়েছে বলে অজুহাত দেওয়া যায় কি? কোন যুক্তিতে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? বিচারপতি খান্না বলেন, "আমরা ঐক্যবদ্ধ সমাজে বাস করি। কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা কাম্য নয়।"
কিন্তু শুনানি চালাকালীন শীর্ষ আদালতে তামিলনাড়ু সরকার জানায়, রামমন্দিরের উদ্বোধন, 'রামলালা'র মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা এবং সেই উপলক্ষে রাজ্যে বিশেষ পুজো-অর্চনা, ভজনে কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। মসজিদের কাছে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন কি কাম্য? প্রশ্ন তোলেন তামিলনাড়ু সরকারের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল। প্রশ্নের উত্তরে আদালত জানায়, শুধুমাত্র এই কারণে অনুমতি বাতিল করা যায় না। বরং সরকারের উচিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। এই যুক্তি দেখিয়ে অনুমতি বাতিল করলে সমস্যায় পড়তে হবে বলেও জানায় শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ।
এর পর, তামিলনাড়ু সরকারের উদ্দেশে নোটিস জারি করে শীর্ষ আদালত জানায়, রামমন্দির থেকে অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচারের অনুরোধ খারিজ করা যাবে না। অনুমোদন খারিজ করা হলে, তার সপক্ষে সঠিক যুক্তি থাকা দরকার, সব নথিও তুলে ধরতে হবে। আগামী সোমবার এই মামলায় ফের শুনানি রয়েছে।
রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তামিলনাড়ু সরকারকে প্রথম কাঠগড়ায় তোলেন সীতারামনই। তামিলনাড়ু সরকার রাজ্যে রামমন্দিরের অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার হতে দিচ্ছে না। 'রামলালা'র প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন পুজো-অর্চনাও করতে দেওয়া হচ্ছে না রাজ্যে। গোড়াতেই সীতারামনের অভিযোগ খারিজ করে দেয় তামিলনাড়ু সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনাও করে তারা। রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়, 'মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণায় উস্কানি দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়'। এই ধরনের ভুয়ো খবর ছড়ানো হলে কড়া আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় রাজ্যের তরফে। তার পরই বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থ মামলায় দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে।