অযোধ্যা: রাজকীয় উদ্বোধন। উদযাপনের সাক্ষী রইল গোটা দেশ। গত ২২ জানুয়ারী অযোধ্যার রামমন্দিরে (Ram Mandir) রামলালার (Ramlala) প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। অরুণ যোগীরাজের তৈরি রামলালাকে বসানো হয়েছ গর্ভগৃহের বেদিতে। কিন্তু পুরনো যে মূর্তিটি 'আশ্চর্যজনকভাবে' আবিষ্কৃত হয়েছিল বাবরি মসজিদের ভিতর থেকে, সেটি কোথায় গেল? যে মূর্তি ঘিরে এত কাণ্ড বেঁধেছিল রামজন্মভূমি অযোধ্যার নতুন মন্দিরে এখনও সেই বিগ্রহের স্থাপন করা হয়নি। ১৯৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর মূর্তিটি আবিষ্কৃত হওয়ার পরেই একটি অস্থায়ী তাঁবুতে সেটিকে স্থাপন করা হয়। এখন সেটি পুরনো মন্দিরেই রয়েছে। শীঘ্রই পুরনো মূর্তিটি নতুন মন্দিরে স্থানান্তরিত করাহবে। রামলালার নবনির্মিত মূর্তির বিপরীতের সিংহাসনে এটি স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা ও পুরোহিতরা।


নবনির্মিত রামলালা: রামমন্দিরের প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি করা হয় আরও একটি মূর্তি। বেদির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেই রামলালা। মুখে তাঁর স্মিত হাসি। কপালে তিলক, হাতে তির-ধনুক। মূর্তিটি ৫১ ইঞ্চি লম্বা, চওড়া ৩ ফুট। ওজন প্রায় ২০০ কেজি। ভগবান রামকে দাঁড়িয়ে থাকা ভঙ্গিতে পাঁচ বছরের শিশু হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। কালো পাথরের তৈরি এই মূর্তিটি তৈরি করেছেন মহীশূরের শিল্পী অরুণ যোগীরাজ। মূর্তির চালচিত্রে রয়েছে বিষ্ণুর দশাবতার-মৎস্য, কুর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ ও কল্কি। মূর্তির একদিকে হনুমান ও অন্যদিকে গরুড়। মূর্তির যে মুকুটে রয়েছে সূর্য, শঙ্খ, স্বস্তিক, চক্র ও গদা। মূর্তির বিশেষত্ব হল, একটি কৃষ্ণশিলা দিয়েই গড়া হয়েছে এটি। সূত্রের খবর, রাম মন্দিরের জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষ তিনটি মূর্তি তৈরির বরাত দিয়েছিল। মূর্তি তৈরির জন্য নেপাল থেকে শালগ্রাম শিলাও আনা হয়েছিল। কিন্তু তা মূর্তি তৈরির কাজে লাগেনি। কারণ, খোদাইয়ের সময় বারবার সেই পাথর ভেঙে যাচ্ছিল। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কালো পাথরের মূর্তি তৈরি হবে। রাম মন্দিরে রাখার জন্য ৩টি মূর্তির মধ্যে থেকে এটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। বাকি দু'টি বিগ্রহ মন্দিরের অন্যত্র স্থান পাবে। যে বেদিতে রামলালা থাকবেন, সেটি ৩.৪ ফুট উঁচু। তৈরি মাকরানা পাথর দিয়ে।  


কী বলছে ইতিহাস?  ১৩৪ বছরের আইনি বিতর্ক। যার শেষ হয়েছিল গত ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর। সে সময়ে অযোধ্যা-মামলায় ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে বলা হয়, অযোধ্যায় (Ayodhya) বিতর্কিত জমি রামের। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে অন্যত্র পাঁচ একর জমি দিতে হবে। সরকার যদি মনে করে, অধিগৃহীত জমি থেকেই পাঁচ একর জমি তাদের দিতে পারে কিংবা অযোধ্যার অন্য কোথাও জমি দিতে পারে। ট্রাস্ট তৈরি করে অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ করতে হবে। 


তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস এ নাজির। রায়দানের সময় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ তাঁর পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, বাবরি মসজিদ খালি জমিতে তৈরি হয়নি। পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণকে অগ্রাহ্য করা যায় না। নীচে বিশাল কাঠামো ছিল, যা ইসলামিক স্থাপত্যের ধাঁচে নয়। নীচ থেকে পাওয়া জিনিসপত্রও ইসলামিক নয়। সাক্ষ্যেও হিন্দুদের দাবি মিথ্যে প্রমাণিত হয়নি। অযোধ্যা যে রামের জন্মভূমি, এই দাবিরও কেউ বিরোধিতা করেনি।


শোনা যায়, সেই সময়ে বাবরি মসজিদ থেকে পাওয়া গিয়েছিল এই মূর্তিটি। যদিও কীভাবে কোথা থেকে এই মূর্তি মসজিদের ভিতরে এল তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তারপর কেটে গিয়েছে বহু বছর। অবশেষে সব অপেক্ষা শেষ হয়েছে, আড়াই বছর আগে, নরেন্দ্র মোদি রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। গতকাল তিনিই উদ্বোধন করলেন রাম মন্দিরের। রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠাও হল তাঁর হাতেই। গতকাল প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর, আজ থেকে সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে অযোধ্যার রাম মন্দির। উল্লেখ্য, বিস্তৃত জমির ওপরে গড়ে উঠেছে মন্দির। তবে এখনও সম্পূর্ণ হয়নি কাজ। প্রথমের ধাপের কাজ শেষ। বাকিটা ২০২৫-এর মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। 


আরও পড়ুন: Ram Mandir: স্কুটিতে চেপে কল্যাণী থেকে অযোধ্যা! রামমন্দিরে যজ্ঞের সাক্ষী বাংলার 'অসীম সাহসী' দুই বান্ধবী