মুম্বই: দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (অজিত পওয়ার) নেতা বাবা সিদ্দিকি। এই ঘটনাতেও ফের জেলবন্দি গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নাম উঠে এল। মুম্বই পুলিশ যে দু'জনকে গ্রেফতার করেছে, তারা লরেন্সের গ্যাংয়ের সদস্য বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বাবা সিদ্দিকিকে খুনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল মাসখানেক আগেই। গত ২৫-৩০ দিন ধরে রেকি করে তারা। শেষ পর্যন্ত শনিবার রাতে গুলি করে খুন করে বাবা সিদ্দিকিকে। রাজনৈতিক মহল বেশ প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। ফলে এই ঘটনায় মায়ানগরীর পরিবেশ থমথমে। অভিনেতা সলমন খানের বাড়ির বাইরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কারণ এর আগে, তাঁকে খুনের চেষ্টাও চালিয়েছে লরেন্সের গ্যাং। (Salman Khan)


শনিবার রাতে বান্দ্রা ওয়েস্ট এলাকায় বাবা সিদ্দিকিকে লক্ষ্য করে গুলি চলে। ছেলের অফিসের বাইরে তাঁকে লক্ষ্য করে কমপক্ষে ছয়টি গুলি চলে, যার মধ্যে চারটি তাঁর বুকে বেঁধে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই SIT গঠন করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দশের উপলক্ষে আতস বাজিতে যখন মুখরিত চারিদিক, সেই সময়ই গুলি করা হয় বাবা সিদ্দিকিকে। মোট তিন দুষ্কৃতী এই কাজে যুক্ত ছিল বলে দাবি পুলিশের।  এর মধ্যে ২৩ বছরের গুরমেল বলজিৎ সিংহ এবং ধর্মরাজ কাশ্যপকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গুরমেল হরিয়ানা এবং ধর্মরাজ উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। তৃতীয় জন গা ঢাকা দিয়েছে। এর বাইরেও বাবা সিদ্দিকির গতিবিধি সম্পর্কে দুষ্কৃতীদের কেউ বা কারা তথ্য জোগান দিচ্ছিল বলেও জানা গিয়েছে। (Baba Siddique Death)


মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকি। বিলাসরাও দেশমুখ সরকারের খাদ্য, নাগরিক পরিষেবা এবং শ্রম মন্ত্রী ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অজিত পওয়ারের NCP-তে যোগদান করেন। Y ক্যাটেগরির নিরাপত্তাও পেতেন বাবা সিদ্দিকি। কী কারণে তাঁকে খুন করা হল, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। বলিউড এবং শিল্পমহলেও বেশ কদর ছিল বাবা সিদ্দিকির। অভিনেতা শাহরুখ খান, সলমন খানের সঙ্গেও দহরম মহরম ছিল তাঁর। এমনকি তাঁর মধ্যস্থতাতেই শাহরুখ ও সলমনের মধ্যে বিবাদ মেটে বলে জানা যায়। এর আগে সলমনকে খুনের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি, তাঁর বাড়ির বাইরেও গুলি চালায় লরেন্স গ্যাং। বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের আরাধ্য কৃষ্ণসার হরিণ খুন মামলার জেরেই সলমন লরেন্সের হিটলিস্টে উঠে আসেন বলে জানা যায়। যদিও সলমনের থেকে মোটা টাকা আদায়ও লরেন্সের লক্ষ্য হতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের। সেই আবহেই বাবা সিদ্দিকি খুন হলেন। 



লরেন্স এই মুহূর্তে জেলবন্দি রয়েছে। কিন্তু জেল থেকে ভিডিও কলে সংবাদমাধ্যমেও আবির্ভূত হয়েছে সে, আবার হুমকি বার্তাও পাঠিয়েছে। গত এপ্রিল মাসেই তার গ্যাংয়ের দুষ্কৃতীরা সলমনের বাড়ির বাইরে গুলি চালায়। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন ধৃত একজনের মৃত্যুও হয়। বাবা সিদ্দিকির উপর হামলায় সেই ঘটনার কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ সূত্রে খবর, লরেন্স জেলে থাকলেও, আমেরিকা থেকে আরও তিন জন গ্যাংটি চালাচ্ছে। এর মধ্যে একজন হল, লরেন্সের ভাই আনমোল বিষ্ণোই। আনমোলের নির্দেশেই সলমনের বাড়ির বাইরে গুলি চলে। গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের নাম জড়ায় পঞ্জাবের শিল্পী সিধু মুসেওয়ালার খুনে। আর এক গ্যাংস্টার রোহিত গোদারও সলমনকে খুনের চেষ্টায় যুক্ত। দিল্লির পুলিশের একটি দল মুম্বই এসে পৌঁছচ্ছে। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল আধিকারিকদের মতে, মুম্বইয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতেই বাবা সিদ্দিকিকে খুন করেছে লরেন্স গ্যাং। তবে এখনও পর্যন্ত বাবা সিদ্দিকিকে খুনের দায় স্বীকার করেনি লরেন্স গ্যাং।