নয়াদিল্লি: শিল্পকর্মের মূল চরিত্র বলতে একটি পাকা কলা। দেওয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো সেটি। ধারণাবাদ বা ধারণাগত শিল্প হিসেবে নিজের এমনই শিল্প প্রদর্শনীতে তুলে ধরেছিলেন ইতালির মওরিজিও ক্যাতেলান। সাধারণ মানুষের চোখে টেপ দিয়ে আটকানো পাকা কলাটি শিল্পকর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে কি না সেই নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, জহুরির চোখ শিল্পীর কদর বুঝলেন। আর তাই প্রায় ৫২ কোটি টাকায় ওই শিল্পকর্ম কিনে নিলেন ক্রিপটোকারেন্সি ব্যবসায়ী। (Viral News)


আমেরিকার নিউ ইয়র্কের নিলাম সংস্থা Sotheby's সম্প্রতি বিখ্যাত শিল্পীদের সৃষ্টিগুলি বিক্রির আয়োজন করেছিল। বুধবার সেখানেই মওরিজিও-র ওই সৃষ্টি, টেপ দিয়ে  আটকানো পাকা কলাটি ৬২ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয়ে যায়, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫২ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা। Sotheby's-র তরফেই এত মোটা অঙ্কে শিল্পকর্মটি বিক্রির কথা জানানো হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়, 'পৃথিবীর সবচেয়ে কুখ্যাত কলাটি ৬.২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হল'। (Banana Taped to Wall)


টেপ দিয়ে আটকানো কলাটিকে 'Edible' সৃষ্টি হিসেবে উল্লেখ করেন মরিজিও, অর্থাৎ সেটি ভক্ষণযোগ্য। ২০১৯ সালে প্রথমে মায়ামি সমুদ্রসৈকতে ওই শিল্পকর্ম নিয়ে হাজির হন তিনি। শিল্পকর্মের নাম দেন 'কমেডিয়ান'। সেই সময় বিষয়টি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। টেপ দিয়ে আটকানো কলাটিকে আদৌ শিল্পকর্ম হিসেবে গন্য করা উচিত কি না ওঠে প্রশ্ন।



কিন্তু মওরিজিওর তরফে যুক্তি ছিল, দেওয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো কলাটি আসলে শিল্পকর্মের বাণিজ্যিকরণকে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। আজকের দিনে পৃথিবীর সর্বত্র শিল্পকর্ম বিলাসিতার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিত্তশালীরাই সেরা শিল্পকর্মের নাগাল পান, বাকিদের কাছে তা পৌঁছয় না। শিল্পকর্ম যে বিলাস দ্রব্য নয়, তার উপর সকলের সমান অধিকার রয়েছে, তার প্রতীক স্বরূপই এমন সৃষ্টি করেছেন তিনি। 


চিনা বংশোদ্ভূত আমেরিকার ক্রিপ্টোকারেন্সি সংস্থা Crypto-র প্রতিষ্ঠাতা জাস্টিন সান এবার মরিজিও-র ওি শিল্পকর্ম কিনে নিয়েছেন।  Sotheby's-কে তিনি বলেন, "এটা শুধুমাত্র শিল্পকর্ম নয়। এটা আসলে সাংস্কৃতিক বিস্ময়, যা শিল্প, মিম এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন করেছে। আমার বিশ্বাস, এই শইল্পকর্ম আগামী দিনে আরও আলোচনা, ভাবনার উদ্রেক ঘটাবে, ইতিহাসে জায়গা করে নেবে।"


কিন্তু মোটা টাকা খরচ করে ওই শিল্পকর্ম কিনলেও, সেটিকে বাঁচিয়ে রাখবেন কী করে জাস্টিন? কলা তো পচে যাবে? তার জন্য একটি সার্টিফিকেট পাচ্ছেন তিনি, যাতে বোঝা যায় সত্যি সত্যি মওরিজিও-ই সেটির সৃষ্টিকর্তা। পাশাপাশি, নির্দিষ্ট সময়ের পর পচে যাওয়া কলা পাল্টে নতুন কলাও লাগানো যাবে। 


এমন শিল্পকর্মের জন্য বরাবরই খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন মওরিজিও। ১৮ কারাট সোনা দিয়ে এর আগে টয়লেট তৈরি করেছিলেন তিনি।  প্রথম দফায় যখন আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট হন ডোনাল্ড ট্রাম্প, হোয়াইট হাউসে ওই সোনার টয়লেট তাঁকে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মওরিজিও।