ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ফের উত্তপ্ত বাংলাদেশ। নতুন করে রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের একাধিক শহরে অশান্তির আগুন ছড়াল। আন্দোলনরত ছাত্র এবং পুলিশ ও শাসকদলের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন প্রান্তে এই হিংসার ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৭২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আন্দোলনরত ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানি গ্যাসের সেল ফাটায়, স্টান গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ।


রবিবার সন্ধে ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে বাংলাদেশ সরকার। গত মাসে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর এই প্রথম এ ধরনের পদক্ষেপ নিল সেদেশের সরকার। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয়দের সতর্ক করল ভারত সরকার। 


১৫ বছর শাসন করার পর এ বছর জানুয়ারি মাসেই চতুর্থবারের জন্য ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন হয় শেখ হাসিনার। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে চলা এই আন্দোলনের জেরে যথেষ্ট চাপে সরকার। কারণ, প্রতিবাদকারীরা এখন একটা দাবিতেই অনড়, তা হল তাঁর (শেখ হাসিনার) পদত্যাগ। 


রবিবার হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন বহু আন্দোলনকারী। ঢাকার সেন্ট্রাল শাহবাগ স্কোয়ারে তাঁরা জমায়েত করেন। বিভিন্ন শহরের রাস্তায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায় বলে এএফপি সূত্রের খবর। রাজধানী শহর ছাড়াও, মূল হাইওয়েগুলিকে অবরুদ্ধ করে দেন আন্দোলনকারীর। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। বহু শহরে বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামি লিগের সমর্থকরাও রাস্তায় নেমে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশের মূল বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি। তাঁরা একযোগে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার স্লোগান তোলেন। দেশবাসীর উদ্দেশে কর না দেওয়ার আর্জি জানান। যেহেতু এর আগেরবার জুলাইয়ে পুলিশ তাঁদের আন্দোলনকে দমিয়ে দিয়েছিল, তাই এবার বাঁশ হাতে আন্দোলনে নামেন প্রতিবাদকারীরা।


প্রেক্ষাপট-


সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ-বাতিলের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ।


১৯৭২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মুজিবর রহমান সরকারি চাকরিতে মুক্তি যোদ্ধাদের পরিবারের জন্য় ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করেন। ২০১৮ সালে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর এই সংরক্ষণ ব্য়বস্থা খারিজ করে দেয় বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার। ২০২১ সালে হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্ত চ্য়ালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কয়েক জন। গত ৫ জুন হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্তকে 'অবৈধ' অ্য়াখ্য়া দিয়ে সংরক্ষণ ব্য়বস্থা ফের কার্যকরের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তারপর থেকেই রোষের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ। জুলাইয়ের শেষ দিকে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ আসনেই মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। বাকি ৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। এরমধ্য়ে মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তান এবং নাতি-নাতনির জন্য় সংরক্ষিত থাকবে ৫ শতাংশ আসন। অনগ্রসর শ্রেণি পাচ্ছে এক শতাংশ কোটা। বাকি এক শতাংশ কোটার সুবিধা পাবেন প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকেরা। অর্থাৎ আগের মতো ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে না। ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এখন পাঁচ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশের পরেও বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। লাঠি-সোঁটা হাতে আন্দোলনকারীদের তাণ্ডব, সশস্ত্রবাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ, সেনাবাহিনী ও পুলিশকে লক্ষ্য় করে ইটবৃষ্টি, পাল্টা গুলি ও টিয়ার গ্য়াসের শেল ফাটিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর জবাব। সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েক দিনের লাগামহীন অশান্তির সাক্ষী এদিনও থাকল ওপার বাংলা।