হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের পর হিন্দুদেরই কণ্ঠরোধের চেষ্টা? বাংলাদেশে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির প্রতিবাদে ফুঁসছে বিভিন্ন মহল। তার মধ্যেই পদ্মাপাড়ের দেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা শুরু হল। এই নিয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা। তিন মাসের বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের বেলাগাম আক্রমণের শিকার হচ্ছে হিন্দুরা। আর যারা হিন্দুদের হয়ে মুখ খুলছে, তাদেরও কণ্ঠরোধের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মহম্মদ ইউনূস সরকার! একদিকে ইসকনের সন্ন্যাসীকে গ্রেফতার, অন্যদিকে, ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার তোড়জোড়।
এবার বাংলাদেশে অত্যাচারিত হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানোয় সেদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলতে শুরু করল কট্টরপন্থীরা। বাংলাদেশের হাইকোর্টে এনিয়ে মামলা করেছে মনিরুজ্জামান নামে এক আইনজীবী। অন্যদিকে, এনিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে হেফাজতে ইসলামের মতো কট্টরপন্থী সংগঠন। ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো এই হেফাজতে ইসলামের পরিচয় কী? এই মৌলবাদী সংগঠন নিজেদের ইসলামের রক্ষক হিসেবে দাবি করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশে ইসলামের শাসন পুনরুদ্ধার করা। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির যে চেষ্টা জারি রেখেছিলেন, তার কট্টর বিরোধী এই সংগঠন।
২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতায় সহিংস বিক্ষোভ দেখিয়েছিল এই মৌলবাদী সংগঠন। সেই সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কয়েকটি মন্দিরে হামলা চালায় হেফাজতে ইসলামের সদস্যরা। একটি ট্রেনেও হামলা চালানো হয়। সেজন্য তাদের বহু সদস্যকে জেলে বন্দি করে হাসিনা সরকার। ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ফের মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে এই মৌলবাদী সংগঠন। আর শুরু থেকেই তারা নিশানা করতে শুরু করেছে ইসকনকে।
যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ইউনূস সরকারের উপদেষ্টা হয়ে বসে আছেন, বাংলাদেশ চালাচ্ছেন, সেই সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লা প্রকাশ্য সভা থেকে ইসকনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ' আমাদের দেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। আমরা সবার অধিকার রক্ষায় কাজ করব। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদী সংগঠন পরিচালনা করলে বাংলাদেশে এক হাত জায়গাও দেওয়া হবে না। আমার ভাই সাইফুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ইসকনকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। এই ইসকন জঙ্গি, তারা স্বৈরাচারের সঙ্গী। আমরা ভুলে যাইনি, কীভাবে এই ইসকন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সহায়তায় ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। ভারতে বসে যতই ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হোক, আমরা বাংলাদেশের মানুষ সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেব।'
সংখ্যালঘু ওপর আক্রমণের নিন্দা, দোষীদের উপযুক্ত সাজা দেওয়ার কথা না শোনা গেলেও ইসকন সম্পর্কে হুমকি শোনা গেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমের গলাতেও। তিনিও প্রকাশ্য সভা থেকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সব ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু কেউ যদি সহানুভূতিকে দুর্বলতা মনে করে, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। এই চট্টলায় ইসকনের জায়গা হবে না। আমরা ১৬ বছরের খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছি। এমন জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের কাছে হাতের ময়লা।’
এরইমধ্যে চিন্ময়কৃষ্ণ দাস বুধবারও জামিন পাননি। এই প্রেক্ষিতে সনাতনী জাগরণ জোটের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে- তাদের ৮ দফার আন্দোলন চলবে। মিথ্যে মামলা করে সনাতনীদের দমানো যাবে না। চিন্ময় প্রভু বলেছেন, তিনি জেলে থাকলেও যেন আন্দোলন বন্ধ না হয়। তাই সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুত হোন। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী এবং দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে