ঢাকা: সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নীতিতে সংস্কার চেয়ে আন্দোলন। সেই আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। মঙ্গলবার আন্দোলন চলাকালীন ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে তিন জন আবার পড়ুয়া। রাজধানী ঢাকায় দু'জন এবং চট্টগ্রাম ও রংপুরে চার জন মারা গিয়ছেন বলে খবর। সোশ্য়াল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওয় একটি ছেলেকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়। তাঁকে গুলি করে মারা হয় বলে অভিযোগ। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০০ জন। চট্টগ্রাম, রংপুর-সহ একের পর পর এক শহরে পুলিশ এবং আন্দোলকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছে। এই পরিস্থিতিতে পড়শি দেশের বিভিন্ন শহরে স্কুল, কলেজ সব বন্ধ রাখা হয়েছে। (Bangladesh Job Quota Protests)


গত এক সপ্তাহ ধরে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নীতিতে সংস্কার চেয়ে আন্দোলন চলছে। দলে দলে ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ, আন্দোলনে শামিল হয়েছেন সকলেই। সোমবার রাতভর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মোতায়েন রায়ট গিয়ার পরে মোতায়েন ছিল পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে দেশের বড় শহরগুলিতে আধা সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত স্কুল-কলেজ খোলা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। (Bangladesh Students Protest)


দেশের শিক্ষামন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেন, "পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সমস্ত হাইস্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান রাখতে হবে। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত।" আন্দোলনকারীদের তরফে সংরক্ষণ নীতিতে অবিলম্বে সংস্কার ঘটানোর দাবি করা হলেও, বাংলাদেশ সরকার আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি চায়। আন্দোলন ঠেকাতে কড়া অবস্থানই নিচ্ছে পড়শি দেশের সরকার। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো শহরগুলি কার্যতই থমথমে হয়ে রয়েছে।


আরও পড়ুন: Oil Tanker Capsizes Off Oman: ওমান উপকূলের কাছে দুর্ঘটনা, সমুদ্রে উল্টে গেল তেলের ট্যাঙ্কার, নিখোঁজ ১৩ ভারতীয়


এই পরিস্থিতির জন্য যদিও শাসকদল আওয়ামি লিগের ছাত্রসংগঠনকেই দায়ী করছেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাই গত এক সপ্তাহ ধরে চলা আন্দোলনের সম্মুখভাগে ছিলেন। প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি তুলছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ভুল সংরক্ষণ নীতির জন্য মেধার কদর হচ্ছে না, মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা সরকারি চাকরিতে সুযোগ পাচ্ছেন না। এর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ভাবেই আন্দোলন চলছিল। কিন্তু সোমবার আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লিগ আন্দোলনে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। আন্দোলনকারীদের দাবি, এতে পুলিশেরও সহযোগিতা ছিল। এর পরই পরিস্থিতি হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। 


সোমবার ঢাকায় অজ্ঞাত পরিচয় কিছু যুবক দু'টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহুর্মুহু বোতল বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। জায়গায় জায়গায় সংঘর্ষ বাধে। ঢাকা, উত্তর-পশ্চিম রাজশাহি, দক্ষিণ-পশ্চিম খুলনা এবং চট্টগ্রামের একাধিক রাস্তা এবং রেল রুট অবরোধ করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের সরাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। পাশাপাশি রবার বুলেট ছোড়া হয়। লাঠি হাতে, পাথর ছুড়তে দেখা যায় বিরোধী ছাত্র সংগঠনকে। 



পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশে ৩০০০ শূন্যপদে নিয়োগ হয়। সেই তুলনায় প্রায় ৪ লক্ষ পড়ুয়া স্নাতক হন। ফলে সরকারি চাকরির আকাল রয়েছে। সেই নিয়েই আন্দোলন চলছে। এ বছর জানুয়ারি মাসেই পর পর চতুর্থ বারের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মসনদে ফিরেছেন শেখ হাসিনা, তার পরই এত বড় আন্দোলন। কিন্তু সংরক্ষণ নীতি থেকে পিছিয়ে আসতে নারাজ হাসিনা। মঙ্গলবার তিনি বলেন, "১৯৭১-এর যুদ্ধে যাঁরা সর্বস্ব লুটিয়ে দিয়েছিলেন, ব্যক্তিগত স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে, পরিবার-সবকিছু ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রাপ্য।"

এর আগে, ২০১৮ সালেও সংরক্ষণ নীতি নিয়ে আন্দোলন মাথাচাড়া দেয়, তার জেরে সংরক্ষণ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত মাসে হাইকোর্টের নির্দেশের পর আবারও সংরক্ষণ নীতি ফেরানো হয়। গত সপ্তাহে দেশের সুপ্রিম কোর্ট সাময়িক ভাবে হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। আদালত আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের ক্লাসে ফিরতে অুরোধ জানিয়েছেন। চার সপ্তাহ পর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু আন্দোলন স্তিমিত হওয়ার পরিবর্তে পরিস্থিতি তেতে উঠেছে। এমন পরিস্থিতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তরফে বাংলাদেশ সরকারকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। আমেরিকার বিদেশ বিভাগও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বলপ্রয়োগের নিন্দা করেছে। বাংলাদেশ সরকার যদিও নিজের অবস্থানে অনড়।