বাংলাদেশের বইমেলায় তুলকালাম। ঘটনার কেন্দ্রে তসলিমা নাসরিনের একটি বই। তসলিমার লেখা বই স্টলে রাখা নিয়ে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় সোমবার। এক দল তসলিমা বিরোধী প্রথমে তীব্র ক্ষোভ প্রদর্শন ও পরে ভাঙচুর চালায় বইয়ের প্রকাশক সংস্থা ‘সব্যসাচী’র স্টলে। এই ঘটনার পরই তসলিমা ইউনূস সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তসলিমা লেখেন, 'বাংলাদেশের বইমেলায় প্রকাশক সব্যসাচীর স্টলে জিহাদি ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা আক্রমণ করেছে। ... সরকার এই উগ্রপন্থীদের সমর্থন করছে এবং জিহাদি কার্যকলাপ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।'
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। অমর একুশে বইমেলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, 'এ ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ বাংলাদেশে নাগরিকের অধিকার এবং দেশের আইন উভয়ের প্রতিই অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। '
ইউনূস লেখেন,'একুশে বইমেলা এদেশের লেখক ও পাঠকদের প্রাণের মেলা। এদেশের সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিন্তক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মিলনস্থল। বইমেলায় এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চাকে ক্ষুন্ন করে, ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে। অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং এই তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে দেশে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।'
'প্রথম আলো' সূত্রে খবর, বইমেলার ওই স্টলে বিভিন্ন বইয়ের মাধ্যমে নাস্তিকতা প্রচার করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয় একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে । এরপর উগ্রবাদীরা স্টলটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায় । তারই প্রতিক্রিয়ায় বিরাট সংখ্যর লোকজন জড়ো হয়ে যান মেলা প্রাঙ্গনে ওই স্টলের সামনে। প্রথমে স্টলের সামনে স্লোগান তোলা, তারপর প্রকাশককে রীতিমতো হেনস্তা করা হয়। 'ধানমন্ডি ৩২-এর জায়গায় আবার একটি নতুন, জমকালো ধানমন্ডি ৩২ নির্মাণ করা উচিত। শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি সংরক্ষণ করা উচিত। একটি জাদুঘর তৈরি করা উচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত ভাস্কর্য এবং জাদুঘর আরও বৃহত্তর এবং বৃহত্তর পরিসরে পুনর্নির্মাণ করা উচিত। স্কুল ও কলেজের পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্ভুলভাবে এবং অপরিবর্তিতভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ হাসিনা যেসব ভুল করেছিলেন তা উল্লেখ করা উচিত। তার সেগুলির জন্য অনুশোচনা এবং অনুশোচনা বোধ করা উচিত। তার'
ঘটনা সামনে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন তসলিমা। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে মুজিবরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে হামলা অগ্নি সংযোগের ঘটনার কড়া নিন্দা করেন সাহিত্যিক। তারপরই বইমেলায় এই ঘটনা।