সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায় ও আবির দত্ত, কলকাতা : প্রকাশ্যে ভারতীয়দের অবমাননাকর মন্তব্য। ভারতীয় কিংবদন্তীদের বাংলাদেশের ভিটে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা। বাংলাদেশে ভারতীয়দের শাড়ি পোড়ানো। ইউনূস-জমানায় বাংলাদেশের ভারত-বিদ্বেষী চেহারাটা বেরিয়ে আসছে ক্রমাগত। এই সুযোগেই তাদের কাছে টানার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে পাকিস্তান ও চিন। নৈরাজ্য়ের বাংলাদেশে নিজেদের জমি মজবুত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে দুই দেশই। মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের পাক-হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।
বুধবার ঢাকার গুলশনে BNP চেয়ারপার্সন খালেদার বাসভবনে যান চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। দু'জনের মধ্য়ে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক চলে। শুধু তাই নয়। খালেদা জিয়াকে চিনে গিয়ে চিকিৎসা করার আহ্বান জানিয়েছেন চিনা রাষ্ট্রদূত। চিকিৎসার খরচ চিনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে বহন করা হবে বলেও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এর আগে অক্টোবর মাসেও, BNP-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
BNP যখন চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করছে, তখন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করতে মরিয়া মহম্মদ ইউনূসের সরকার। তারই ধাপ হিসেবে, পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিল করা হল নিয়ম। এতদিন পাকিস্তানের নাগরিকরা বাংলাদেশের ভিসা পেতে চাইলে, সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সিকিওরিটি সার্ভিসেস ডিভিশনের 'নো অবজেকশন' লাগত। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এই নিয়ম শিথিল করে দিল ইউনূস সরকার। ২ ডিসেম্বর থেকে এই ছাড়পত্র ছাড়াই, বাংলাদেশের ভিসা পাচ্ছেন পাকিস্তানের নাগরিকরা।
মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য প্রশান্ত বড়ুয়া, 'নিজের স্বার্থে করছে, দেশের স্বার্থে কিছু করে না। চিনও তো নিজের স্বার্থের দিকে ঝুঁকে। ওদের স্বার্থ যেখানে, সেখানেই কাজ করবে।'
বাংলাদেশের পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা ভারতের পক্ষে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল খালেদা জিয়ার শাসনকাল। উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদে মদত দেওয়া অনুপ চেটিয়ার মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছিল তারা। ভারতে হামলা চালাতে আসা জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহ করে আগাগোড়া পাকিস্তানকে মদত করে এসেছে তৎকালীন বিএনপি সরকার। সূত্রের দাবি, এবারও ইউনূসের সরকার ক্ষমতায় আসতেই, ঢাকায় সক্রিয় হতে শুরু করেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা ISI। এই আবহে পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের সখ্য় ভারতের জন্য় যথেষ্ট চিন্তার বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
বাংলাদেশ যখন পাকিস্তান, চিনকে কাছে টেনে ভারতের বিরুদ্ধে দল ভারী করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন ভারতও কি পাল্টা কোনও কূটনৈতিক চাল দেবে? বাংলাদেশকে কোণঠাসা করতে কোনও কৌশল নেবে নয়াদিল্লি?