কলকাতা: এই কয়েকদিন আগেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সেরে গিয়েছেন শেখ হাসিনা। আর এখন তিনি দেশত্য়াগী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি কোথায় যাবেন? কোন দেশে আশ্রয় নেবেন? এইসব প্রশ্নের মধ্যেই ঘুরেফিরে আসছে ১৯৭৫ সালের প্রসঙ্গ। যখন শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। এরপর দীর্ঘ সময় ভারতেই কাটিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এবার কী অবস্থান নেবে ভারত সরকার? সেই দিকেই নজর রয়েছে সব মহলের।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৫ বছরের হাসিনা-যুগের সমাপ্তি ঘটল। পদত্য়াগ করতে বাধ্য় হলেন মুজিব-কন্য়া। গতকালই বাংলাদেশ থেকে ভারত পৌঁছেছেন শেখ হাসিনা। এরপর কোথায় যাবেন তিনি? কোথায় আশ্রয় নেবেন? সূত্রের খবর ভারতে কয়েকটা দিন থাকবেন। কিন্তু তারপর? ব্রিটেন কি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে? ভারত বন্ধু হিসাবে পরিচিত শেখ হাসিনাকে নিয়ে মোদি সরকারই বা কী পদক্ষেপ নেবে? সোমবারই নিরাপত্তা বিষয়ক ক্য়াবিনেট কমিটির বৈঠক ডাকেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ-সহ অন্য়রা। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধীও বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এখন প্রশ্ন হল, এবার কী করবে নয়াদিল্লি? কী করবে মোদি সরকার? এ নিয়ে যখন জল্পনা তুঙ্গে, তখন অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে, আজ থেকে ৪৯ বছর আগের এক ঘটনার কথা। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনাকে এক ফোনে আশ্রয় দিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। দিনটা ছিল ১৫ই অগাস্ট। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে মাত্র ৪ বছর। ঢাকায় ধানমন্ডির বাসভবনে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে খুন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালও নিহত হয়েছিলেন ঘাতকের বুলেটে। তাঁর দুই মেয়ে - শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা - তখন বিদেশে, ফলে এই দু'জনই কেবল প্রাণে বাঁচেন। বাকিরা ঝাঁঝরা হয়ে যান গুলিতে। প্রধানমন্ত্রী হয়ে মুজিব-কন্যা হাসিনাই ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটিকে পরিণত করেছিলেন সংগ্রহশালায়। সোমবার তিনি ঢাকা ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আগুন ছাই হয়ে গেল মুজিবের স্মৃতি বিড়জিত ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডের সেই সংগ্রহশালা।
১৯৭৫-এ সেই মুজিব-হত্য়ার সময় জার্মানিতে ছিলেন শেখ হাসিনা। সরাসরি ইন্দিরা গাঁধীর দফতরে ফোন করে হাসিনা ও তাঁর বোনকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার আর্জি জানান জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত। সব শুনে তখনই শেখ হাসিনা, তাঁর স্বামী ও বোন রেহানাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। সম্প্রতি স্মৃতিচারণায় তাঁর গলায় উঠে আসে সেই প্রসঙ্গ। শেখ হাসিনা বলেন, " সেই সময় (১৯৭৫) মিসেস গাঁধী তৎক্ষণাৎ বার্তা দিয়েছিলেন যে তিনি আমাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে চান। বিশেষ করে যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো এবং মিসেস গান্ধী। আমরা সিদ্ধান্ত নি এখানে আসার। কারণ আমরা ভেবেছিলাম আমরা যদি দিল্লি যেতে পারি, সেখান থেকে আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারব। আমরা যখন দিল্লিতে ফিরে আসি, প্রথমে একটা বাড়িতে আমাদের রাখা হয়েছিল। সমস্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। কারণ তাঁরাও আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল।'' ১৯৭৫ সালের ২৪ শে অগাস্ট এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন শেখ হাসিনা। প্রায় ৬ বছর ভারতেই থেকেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর গঙ্গা ও পদ্মা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে।
২২ শে জুন শেষবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। হাসিনা তখন প্রধানমন্ত্রী। আর এখন তিনি দেশত্য়াগী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এখন কীভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে ভারত? সোমবার শেখ হাসিনার পদত্য়াগের মুহূর্তের যে ছবি সামনে এসেছে তাতে দেখা গিয়েছে, পরনে নেই ঢাকাই জামদানি। নেই তাঁর সেই চেনা সাজ। সাদা-গোলাপী-নীলের মিশেলে পরনে নেহাতই সাদামাটা একটা শাড়ি। চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।