কলকাতা: রোগী ভর্তি না নেওয়ায় বেহালার নার্সিংহোমে ভাঙচুর। ‘স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি না থাকায় নতুন রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না।’এই যুক্তিতে রোগীর পরিবারকে ফিরিয়ে দেয় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। তারপরই নার্সিংহোমে কর্মীদের সঙ্গে বচসা বাঁধে রোগীর পরিবারের। ভাঙচুর করা হয় আউটডোক-সহ একাধিক ওয়ার্ড। এরপর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বেহালা থানার পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।


স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশে এদিন নার্সিংহোমের গেটে টাঙিয়ে দেওয়া হয় নোটিস- অনিবার্য কারণবশতঃ রোগী ভর্তি বন্ধ। আর সেই থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। করোনা আবহেই  চিকিৎসায় গাফিলতি, বিল নিয়ে অনিয়মের গুচ্ছ অভিযোগ ওঠে বেহালার অ্যাপেক্স নার্সিংহোম, পার্ক সার্কাসের গুড সামারিটান নার্সিংহোম এবং নিউটাউনের উজ্জীবন হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এরপরই স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশে, একই মালিকের ওই ৩টি নার্সিংহোমে রোগী ভর্তি বন্ধ। তবে একথা মানতে চায়নি রোগীর পরিবারের সদস্যরা। সবমিলিয়ে কার্যত ধুন্ধুমার বাঁধে।


অন্যদিকে দুপুরেই প্রকাশ্যে এসেছিল অসহনীয় অবস্থার ছবি। তাই হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সরকারি প্রতিনিধির পায়ে পড়ে গিয়েছেন রোগীর আত্মীয়। হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী ছিল বেহালার অ্যাপেক্স নার্সিংহোম। ওই একই কারণ দেখিয়ে দুপুরেও তিন গুরুতর রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। 


গেটেই তাঁদের জানানো হয়, বেড থাকলেও, স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশে রোগী ভর্তি বন্ধ। ৩ রোগীর জীবন-মরণের ব্যাপার। তাই বেডের জন্য নার্সিংহোমের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে রোগীর আত্মীয়দের তর্কাতর্কি বেধে যায়।


বুধবার এই সময়েই স্বাস্থ্য কমিশনের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল বেহালার অ্যাপেক্স নার্সিংহোমে তদন্ত করতে যান। ওই সময়েই ৩ মুর্মূর্ষু রোগীর পরিবার, অন্য কোথাও বেড না পেয়ে পৌঁছন নার্সিংহোমে। সেই সময় নার্সিংহোমে সরকারি প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন, জানতে পেরে সটান ভিতরে ঢুকে যান রোগীর পরিজনরা।


কমিশনের সদস্য, এসএসকেএমের চিকিৎসক মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত হতচকিত করে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর পায়ে পড়ে যান বরুণ মুখোপাধ্যায় নামে এক করোনা রোগীর আত্মীয়। অনেক কাকুতিমিনতির পর নির্দেশ দেওয়া হয়, নার্সিংহোমের গেটে অপেক্ষায় থাকা ৩ রোগীকেই ভর্তি নিতে হবে।


দেশের চিকিৎসা পরিকাঠামোকে চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ। একদিকে, ঊর্ধ্বমুখী কোভিড রোগীর সংখ্যা। তার সঙ্গে সাধারণ রোগীদের চাপ। দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে অক্সিজেনের আকাল আর হাসপাতালে বেডের জন্য হাহাকার। বেহালার এই নার্সিংহোমে যে ঘটনা ঘটল, তাতে স্পষ্ট পরিস্থিতি কতটা অসহনীয়। ৩ রোগী বেড পেলেন ঠিকই। তবে রোগী ভর্তি বন্ধের খাঁড়া এখনই উঠছে না বেহালার অ্যাপেক্স নার্সিংহোমের ওপর থেকে।