শিলিগুড়ি: দিকে দিকে কাটমানির অভিযোগে তখন জেরবার তৃণমূল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাতে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল দলের অন্দরে। সেই সময় ওষুধের কাজ করেছিল ‘দিদিকে বলো’ (Didike Bolo) কর্মসূচি। তার আওতায় ফোন করে সরাসরি অভিযোগ জানানো যেত সরকারকে। ইদানীং যে ভাবে রাজ্যে অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে চলেছে, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তাতে ‘দিদিকে বলো’র আদলেই নয়া কর্মসূচির ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banrejee)। জানিয়েছেন, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে সরাসরি মিসড কল দিয়ে জানাতে। রাজনৈতিক দলের নেতা হোক পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসার, কেউ ছাড় পাবেন না। বরং অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীকে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানালেন মমতা।
'দিদিকে বলো'র আদলে নয়া কর্মসূচি মমতার
রবিবার শিলিগুড়ির সভা থেকে নয়া কর্মসূচির ঘোষণা করেন মমতা। ‘দিদিকে বলো’র মতো এখনও পর্যন্ত কোনও ফোন নম্বর যদিও প্রকাশ করেনি রাজ্য সরকার। তবে মমতা বলেন, “কারও বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ থাকে, মিসড কল দিয়ে জানান। কোথায় কী ঘটছে আমাকে জানাবেন, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। রাজনৈতিক দলের নেতা হোক কী, অফিসার কেউ ছাড় পাবে না।”
পানিহাটি, ঝালদা এবং বগটুইয়ের (Rampurhat Fire) সাম্প্রতিক ঘটনায় বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। সেই আবহে পুলিশমন্ত্রী মমতার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। তাই এ দিন মমতা বলেন, “একটা ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তবুও গোটা পুলিশকে বদনাম করা হচ্ছে। এখনও বলব কারও কাছে যদি কোনও খবর থাকে যে গন্ডগোল হবে, তাহলে থানায় জানান। পুলিশ যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। কেউ গন্ডগোল ধরিয়ে দিতে পারলে সরকার পুরষ্কৃত করবে। আমি ২ মাস সময় দিচ্ছি, তারপর বিরুদ্ধে কারও যদি কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেব।”
বিরোধীদের কটাক্ষ মমতাকে
যদিও এ নিয়েও মমতাকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, “পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করছে তৃণমূল সরকার। পুলিশ তো কোনও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান নয়! তাকে পরিচালিত করছে সরকার। এখানে তো সরকার বলে কিছু নেই, তৃণমূলের সরকার।”
সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “আমরা তো বলিনি সব পুলিশ খারাপ। কিন্তু খারাপের সঙ্গে মিশলে বেশি খারাপ হয়ে যায় পুলিশ। আগেও তো প্রচুর মিসকল দিয়েছে লোকে। লক্ষ লক্ষ দিয়েছে। আর যারা সরাসরি দেখা করতে গেছেন, তাঁদের লাঠির আঘাত করে তাড়িয়ে দিয়েছে।” সবমিলিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তুঙ্গে বাগ্যুদ্ধ।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যবাসীর সঙ্গে নিবিড় জনসংযোগ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে নামে তৃণমূল। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের উদ্যোগে শুরু হয় ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি। আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পর ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনও রয়েছে। আগে অস্ত্র করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জন্যই ‘দিদিকে বলো’র আদলে এই কর্মসূচি কি না, প্রশ্ন উঠছে।