আশাবুল হোসেন, রুমা পাল ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা ও শিলিগুড়ি : "দেউচা পাঁচামি (Deucha Pachami) যাতে না হয়, তারজন্য রামপুরহাট (Rampurhat) করা হয়েছে।" বীরভূমে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজ এই ভাষাতেই সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এনিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।


বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। সেই ঘটনার নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, দেউচা পাঁচামির প্রকল্পকে রুখে দিতেই রামপুরহাটের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে । 


রামপুরহাট থেকে  প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে মহম্মদবাজারের দেউচা-পাঁচামিতে কয়লা প্রকল্পের জন্য শুরু হয়েছে অধিগ্রহণের কাজ। সেই প্রকল্প ঘিরেও গত কয়েকদিন ধরেই শাসক-বিরোধী তরজা চলছে। এই প্রেক্ষাপটেই মুখ্যমন্ত্রী-র মারাত্মক অভিযোগ! মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমরা বীরভূমে ১ লক্ষ চাকরি করে দিতে চাইছি। মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করছে, চায় না এখানে কর্মসংস্থান হোক।"


মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলতেই, এসেছে পাল্টা জবাব। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, বিরক্তি, হতাশা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বিরুদ্ধে বলছে, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কথা সেদিইন সামনে আসে, যেদিন ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে, হাসপাতালে না গিয়ে, সুচপুরের কথা যিনি তুলে এনেছিলেন, তাঁর পাশে বসে ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। তৃণমূল, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, "দেউচা পাঁচামি একটা গল্প, আগেও বলেছি ওখানে শিল্প হলে আমাদের থেকে বেশি খুশি হবে না। শিল্প করুন, দয়া করে খুন খারাপি করবেন না।"


এদিকে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার রাজ্য পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের হাত থেকে নিয়েছে CBI। এদিন তাদের সাহায্য করার কথা জানালেও, CBI-এর ব্যর্থতার উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি। 


মমতা বলেন, সিবিআই কাজ করুক ভাল, কিন্তু সিপিএম-বিজেপির কথা শুনে কাজ করলে রাস্তায় নামব। নোবেল চুরির বিচার হয়নি, নন্দীগ্রামের বিচার হয়নি, নেতাই-সিঙ্গুরে আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। একটা ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তবুও গোটা পুলিশকে বদনাম করা হচ্ছে। কাল যদি পুলিশ কোনও কাজ না করে, তাহলে দিল্লি থেকে পুলিশ এসে পাহারা দেবে? একজনের দোষ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, কিন্তু সবাইকে দোষ দেওয়া উচিত নয়।


যদিও শমীক ভট্টাচার্যের পাল্টা তোপ, আসলে পুরো বিষয়ের মধ্যে ২জন পুলিশকে বলির পাঠা করা হয়েছে। যে চক্রান্ত হয়েছে, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ চক্রান্ত, শুধু আনারুল, আইসি বা এসডিপিও নেই। সঙ্ঘবদ্ধভাবে এই হত্যালীলা সংগঠিত করা হয়েছে।


রামপুরহাটকাণ্ডের তদন্ত করছে CBI। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য সরকারও। কিন্তু সেই সঙ্গে রাজনৈতিক তরজাও চলছে পাল্লা দিয়ে।