সাঁতরাগাছি: নবান্নে পৌঁছতে না পারলেও, বিজেপি-র অভিযান ঘিরে অগ্নিগর্ভ হাওড়ার সাঁতরাগাছি। জলকামান দেগে, কাদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু দফায় দফায় সংঘর্ষে কাতারে কাতারে বিজেপি কর্মীদের সামনে এখন কার্যতই মুষ্টিমেয় পুলিশ। পুলিশকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ইট, পাথর উড়ে আসছে। রেলরলাইন থেকে পাথর ছুড়ে জড়ো করে, ঝোলায় পাথর নিয়ে, গুলতিতে বসিয়ে তা পুলিশকে লক্ষ্য করে ছুড়তে দেখা গিয়েছে বিজেপি কর্মী, সমর্থকদের। তাতে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী রক্তাক্ত এবং আহত হয়েছেন বলে খবর। পাথর থেকে বাঁচতে ঢাল দিয়ে নিজেদের আড়াল করে তফাতে সরে যেতে দেখা যায় পুলিশকে। শুধু তাই নয়, কাছের নির্মীয়মাণ এরকটি বাড়ি থেকেও আধলা ইট এনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। 


রেললানইনের পাথর তুলে পুলিশের উপর বর্ষণ সাঁতরাগাছিতে


মঙ্গলবার বিজেপি-র নবান্ন অভিযানের শুরুতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। প্রথমে সাঁতরাগাছিতে পুলিশের গার্ড রেল টপকানোর চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। এরপর পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় কাচের বোতল, ইট, পাথর, বাঁশ। গার্ড রেল ভাঙার চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয় পুলিশের কিয়স্ক। পাল্টা জল কামান ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। লাঠি উঁচিয়ে বিজেপি কর্মীদের তাড়া করে পুলিশ। অন্যদিকে, হাওড়া ময়দানের কাছে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেন বিজেপি কর্মীরা। বিজেপি কর্মীদেরও কয়েক জন আহত হয়েছেন। আটক হয়েছেন বেশ কয়েক জন। তবে মারমুখী বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে পুলিশ এই মুহূর্তে দূরত্বে সরে গিয়েছে। স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজনের দেখা নেই। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট।


কিন্তু সেখানেই বিক্ষোভ থামেনি। বরং দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। এ দিন সাঁতরাগাছি রেল সংলগ্ন জলাশয়ের একপাশে ছিল পুলিশ। আর জলাশয়ের অন্য পাশে, স্টেশনের উপর ছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। একদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকেন তাঁরা। তার পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভ ঠেকাতে আগে থেকেই সেখানে  জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, বজ্র ভ্যান রাখা ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেখে এর পর জলকামান দাগতে শুরু করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জও করা হয়। কাঁদানে গ্য়াসের শেল ফাটিয়ে পিছু হটানোর চেষ্টা করা হয় বিক্ষোভকারীদের। তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার বদলে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সাঁতরাগাছি। 


আরও পড়ুন: BJP Nabanna Rally: ধর্নায় বসে সিপি-র হাতে গ্রেফতারির দাবি, সাঁতরাগাছিতে প্রিজন ভ্যানে তোলা হল সুকান্তকেও


অন্য দিকে, হাওড়া ময়দানে সুকান্ত মজুমদারের মিছিল ঘিরেও উত্তেজনা। বিজেপি কর্মীদের ইটবৃষ্টি। পাল্টা জল কামান ছোড়ে পুলিশ। রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখান সুকান্ত মজুমদার, অগ্নিমিত্রা পাল। অগ্নিমিত্রা বলেন, “বাগুইআটিতে দুই ছেলে খুন হল, খুনিদের ধরতে পারে না পুলিশ। আর আমরা বাংলার মানুষের হয়ে প্রতিবাদ করছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নেতৃত্বে কোটি কোটি টাকা চুরি করছেন, আর পুলিশ এসে বলছে আমাদের রাজ্য সভাপতিকে গ্রেফতার করবে। আমরা বলেছি, আপনি কে, চিনি না। আপনি ক্যাডার হতে পারেন তৃণমূলের। আমরা বলেছি, সিপিকে ডাকুন। উনি না এলে আমরা উঠছি।”


বিজেপি-র নবান্ন অভিযান ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষ সাঁতরাগাছিতে


বিজেপি-র নবান্ন অভিযানের দিন মেদিনীপুরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে এ দিন কটাক্ষও ছুড়ে দেন সুকান্ত। তিনি বলেন, "ব্য়ারিকেডের উপর চেষ্টা করলে আমাকে নিশানা করেই প্রথম জলকামান চালানো হয়। এমন ভাবে চালানো হয় আমার ঘাড়ে চেষ্টা করে। আমার সেক্রেটারি ব্যথা কমানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু এ ভাবে সম্ভব নয়। ডাক্তার দেখাতে হবে। এখানে গণতন্ত্রকে খুন করা হয়েছে। বিজেপি-র সংখ্যা দেখে ভয় পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই পালিয়ে গিয়েছেন। বুঝতে পেরেছিলেন, কত মানুষ আসবেন। আজ যত মানুষ এসেছেন, তা আমাদের মোট লোকের ৩০ শতাংশ।" এর পরই তাঁকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।