রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: সন্ধেয় নামলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ত গোটা এলাকায়। কোনও দিন নিখোঁজ হয়ে যেত ঘরের পোষা ছাগল। কোনওদিন সকালে উঠে দেখা যেত বাড়ির পোষা মুরগির খাঁচা ফাঁকা। কখনও কখনও সন্ধে নামলেই শোনা যেত চিতাবাঘের গর্জন। আতঙ্কে সিঁটিয়ে যেতেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ জমা পড়ছিল বন দফতরের কাছে। তড়িঘড়ি চিতাবাঘ পাকড়াও করার জন্য চেষ্টা শুরু করেন বন দফতরের কর্মীরা। বসানো হয় খাঁচা।


অবশেষে জলপাইগুড়ির মেটেলি ব্লকের নাগেশ্বরী চা বাগানে (Nageshwari Tea Garden) ধরা পড়ল চিতাবাঘ (Leopard)। বৃহস্পতিবার, বাগানের স্থানীয় বাসিন্দারা নাগেশ্বরী চা বাগানের ১২ নাম্বার সেকশনে বসানো খাঁচা থেকে চিতাবাঘের গর্জন শুনতে পায়। গর্জন শুনেই খাঁচার কাছে যান গ্রামবাসীরা। সেখানে দেখা যায় একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ খাঁচার ভিতর এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। খবর চাউর হতেই বহু মানুষের ভিড় হয় এলাকায়। খাঁচায় চিতাবাঘ ধরা পড়ার খবর দেওয়া হয় বন দফতরের খুনিয়া স্কোয়াডে। সেখান থেকে বনকর্মীরা এসে খাঁচা-সহ চিতাবাঘটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।


নাগেশ্বরী চা বাগানে দিনের পর দিন চিতাবাঘের অত্যাচার বেড়েই চলছিল। সন্ধ্যার পরেই চা বাগান থেকে সংলগ্ন জনবসতি এলাকায় ঢুকে যাচ্ছিল চিতাবাঘ। বাড়িতে ঢুকে ছাগল, মুরগি তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। তারপরেই বাগানের তরফে বন দফতরের খুনিয়া স্কোয়াডের কাছে খাঁচা বসানোর দাবি জানানো হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর বন দফতরের তরফে বাগানের ১২ নম্বর সেকশনে খাঁচা বসানো হয়। তারপর প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে চেষ্টা চলে। দেওয়া হয় ছাগলের টোপও। অবশেষে বৃহস্পতিবার চিতাবাঘ খাঁচা বন্দি হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বাগানের বাসিন্দাদের  মধ্যে। বন দফতরের খুনিয়া স্কোয়াডের রেঞ্জার সজল কুমার দে বলেন, 'চিতাবাঘটি সুস্থ রয়েছে। সেটিকে গরুমারা জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।'


জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ারের ডুয়ার্স এলাকায় বারবার সামনে আসে মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাত। কখনও হাতি, কখনও বাইসন, কখনও আবার চিতাবাঘ। প্রায়শই মেলে বন্যপ্রাণীর দেহও। এই মাসেই আলিপুরদুয়ারে ফালাকাটা ব্লকের জটেশ্বর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মিলেছিল একটি চিতাবাঘের রক্তাক্ত দেহ। অক্টোবরে ফালকাটাতেই তাসাটি চা বাগানে এক বালক আক্রান্ত হয়েছিল চিতাবাঘের হানায়। দলগাঁও বনবস্তি এলাকায় বারবার চিতাবাঘের হানার ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বরে ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকে আইভিল চা বাগানে চলন্ত স্কুটিতে চিতাবাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল একজন। 


আরও পড়ুন: কলকাতার ৩ হাসপাতালে ৩ করোনা আক্রান্ত, হবে জিনোম সিকোয়েন্সিং