কলকাতা: লাগাতার ভারী বৃষ্টি, সিকিম থেকে আসা মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জল, দুইয়ে মিলে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ (North Bengal Flood)। ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘর-বাড়ি হারিয়ে সহায়-সম্বল হীন হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। একের পর এক গ্রাম ও শহর জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। তার মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে মৃতদেহ ভেসে ওঠার ঘটনাও সামনে এসেছে (Flood in North Bengal)। এই পরিস্থিতিতে এদিন উত্তরবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন GTA চেয়ারম্যান অনীত থাপা। পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও।


গত কয়েক দিন ধরে একটানা ভারী বৃষ্টিতে বিপদের ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। বুধবার সকালে পড়শি রাজ্য সিকিমে মেঘভাঙা বৃষ্টি আছড়ে পড়লে, বাঁধ ভেঙে সেই জলের স্রোতও আছড়ে পড়ে উত্তরবঙ্গে। তার জেরেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের জনজীবন। জায়গায় জায়গায় ধস নেমেছে। জলে ভাসছে মালদা মেডিক্যাল কলেজ চত্বর। জলমগ্ন একাধিক এলাকা।


উত্তরবঙ্গে এই মুহূর্তে ভয়াল রূপ তিস্তা এবং করলা নদীর। নদী উপচে জল ঢুকে পড়েছে বসতি এলাকায়। ধস নেমেছে কালিম্পংয়ের তিস্তা বাজার এবং মেল্লিতে। তার জেরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে নাগরিকদের ঘর-বাড়ি। রাস্তাঘাট সব জলের নীচে চলে গিয়েছে। আশ্রয় হারিয়েছেন বহু মানুষ।


আরও পড়ুন: Sikkim Flash Flood: পার্শ্বচাপের ফলে সংকোচন হ্রদের, সিকিমে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কি নেপালের ভূমিকম্প


তার মধ্যেই, উদ্বেগ বাড়িয়ে জলপাইগুড়ির গজলডোবার চরে অজ্ঞাতপরিচয় মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। দেহটি তিস্তার জলের স্রোতে ভেসে এসেছে বলে অনুমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহিলার দেহটি উদ্ধার করে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেও তিস্তা নদীতে ভেসে এসেছে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের দেহ। এদিন সকালে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২০০ মিটার ভিতরে সিং পাড়া চৌকির কাছে দেহটি উদ্ধার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। দেহটি তুলে দেওয়া হয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে। তিস্তা নদীতে জলস্ফীতির কারণেই দেহটি ভেসে এসেছে বলে অনুমান। 


তিস্তার জলে বানভাসি জলপাইগুড়ির ক্রান্তি ব্লকের বাসুসুবা গ্রাম। জলবন্দি হাজার খানেক মানুষ। বিঘার পর বিঘা কৃষিজমি চলে গিয়েছে জলের নীচে। তাই ফসল নষ্টের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এই মুহূর্তে তিস্তাই ভয় ধরাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ব্যারাজ থেকে জল ছাড়লে আরও কতটা দুর্ভোগ পোহাতে হবে, তা ভেবে উৎকণ্ঠায় তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। গত ১১ বছর ধরে তাঁরা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ বা স্লুইস গেট তৈরির দাবি
জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সেই দাবি পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দারা। 


একটানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। একাধিক ওয়ার্ডে জল ঢুকে গিয়েছে। জমা জল ঠেলেই যাতায়াত করছেন রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা। জলমগ্ন ইংরেজবাজারের নেতাজি পুর বাজার। রথবাড়ি সবজি বাজারও জলের তলায়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি লেনে বসেছে বাজার। ইংরেজবাজার পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে জল জমে রয়েছে।  সেকান্দারপুরে ধসের জেরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। হবিবপুরের আইহো এলাকায় টাঙন নদীর সেতুর পাশেও ধস নামে। সেতুর একাংশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। জল থইথই রথবাড়ি সবজি বাজার, নেতাজি কমার্শিয়াল মার্কেট-সহ একাধিক এলাকা।