আবির ইসলাম, শান্তিনেকেতন: বোলপুরের (Bolpur) ডাকবাংলো মাঠে (Dakbanglow ground) শান্তিনিকেতনে (Shantiniketan) পৌষমেলার বিকল্প মেলা উদ্বোধন করলেন বিশ্বভারতীর (Biswa Varati) প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত সবুজকলি সেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বপন দত্ত, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল ও অন্যান্য আধিকারিকরা।


শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পূর্বপল্লীর পৌষ মেলা মাঠ এখন ফাঁকা। অন্যান্যবারের মতো নেই কোনও প্রস্তুতি। যদিও পৌষ উৎসব করছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। পরম্পরা মেনেই ৬ পৌষ থেকে ৯ পৌষ পর্যন্ত সমস্ত অনুষ্ঠান পালন হবে। সেই মতো সূচিও প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতী । 


যদিও এর আগে জানানো হয়েছিল, বিশ্বভারতী (Viswabharati) কর্তৃপক্ষ জল, বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে পৌষমেলা (Poush Mela 2021) করতে আপত্তি নেই। বোলপুর পুরসভার (Bolpur Municipality) চিঠির উত্তরে জানাল শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। মেলার আয়োজন করতে চেয়ে ২২ নভেম্বর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন (Shantiniketan) ট্রাস্টকে চিঠি দিয়েছিল পুরসভা। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ ছিল পৌষমেলা Poush Mela 2021)। এবার করোনা সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এই পরিস্থিতিতে রীতি মেনে ছোট করে হলেও মেলা হোক চাইছিলেন আশ্রমিকরা। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বভারতীর তরফে কোনও উত্তর মেলেনি বলেই জানিয়েছিলেন পুরপ্রশাসক পর্ণা ঘোষ।


অন্যদিকে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। আজ তিনি বলেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে(State Health Department)  একাধিকবার চিঠি দিয়েও সাড়া মেলেনি ৷ তাই এবছর পৌষমেলা (Poushmela) করেনি বিশ্বভারতী (Visvabharati University) কর্তৃপক্ষ। এদিন পৌষ উৎসবে ছাতিমতলা থেকে এমনই মন্তব্য করেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।


প্রসঙ্গত, এবছরও হচ্ছে না শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। তবে প্রথা মেনে বৈদিক মন্ত্রপাঠ, ব্রহ্ম উপাসনা, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে যথাক্রমে শুরু হয়েছে পৌষ উৎসব।


পৌষমেলা না করার কারণ বললেন খোদ উপাচার্য। পৌষ উৎসবে ছাতিমতলার মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, "পৌষমেলা না হওয়ায় সবার মন খারাপ, আমারও মন খারাপ। আজ যখন ফাঁকা মাঠের পাশ দিয়ে আসছিলাম, মনটা খারাপ হয়ে গেল ৷ কিন্তু, বিশ্বাস করুন আমরা অক্টোবর মাসে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি কি করা উচিত। কিন্তু, তিন বার চিঠি দিয়েও কোনও উত্তর পাইনি ৷ তাই পৌষমেলা করা সম্ভব হয়নি ৷"


এই পরিস্থিতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের হোটেল ব্যবসায়(Hotel Business) ৷ মূলত, পৌষমেলা ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করেই এই এলাকায় হোটেল-লজের ব্যবসা চলে ৷ এক কথায়, পৌষমেলার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল বোলপুর-শান্তিনিকেতনের অর্থনীতি।


প্রতি বছর পৌষমেলার সময় দুই থেকে তিন দিনের প্যাকেজ হিসাবে হোটেল ভাড়া পাওয়া যায় ৷ সারা বছরের থেকে দর থাকে বেশি ৷ ২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ ছিল মেলা ৷ এবারও পৌষমেলার এই অবস্থায় হোটেল-লজের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে ৷ 


শান্তিনিকেতন ও বোলপুরে কমবেশি প্রায় ১৫০ টি হোটেল রিসোর্ট রয়েছে । এ ছাড়াও বহু হোটেল রিসোর্ট গড়ে উঠেছে । এর আগে বোলপুর হোটেল ইউনিয়ন সমিতির সেক্রেটারি জানিয়েছিলেন, পৌষমেলার সময় ভালই ব্যবসা হত। কিন্তু, মেলার সংশয়ে অনেক রুম বাতিল হচ্ছে । এতদিনের যে ভাড়া সেই ভাড়াই নিতে হচ্ছে। চরম একটা ক্ষতির মুখে আমরা চাই, মেলা হোক। তাতে ভাল হয় ।