রঞ্জিত হালদার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: এক পদের দুই দাবিদার। আর তাকে ঘিরে তৃণমূলের অন্দরের মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসার পর পার্টি অফিসের নাম বদলে দেওয়া হল।  দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুর টাউন তৃণমূল পার্টি অফিসকে রাতারাতি বদলে দেওয়া হল বিধায়কের অফিসে।  

একদিক থেকে শোনা যাচ্ছে,  খালি কর খালি কর ....  আওয়াজ উঠল , বাইরে আয় বাইরে আয় !! যুযুধান দুই তৃণমূল নেত্রীর অনুগামীরা। দুই নেত্রীর মধ্যে একজন, লাভলি মৈত্র, সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক। আরেকজন রাজপুরের তৃণমূল নেত্রী কুহেলি ঘোষ। এই ছবি রাজপুর টাউন তৃণমূল কার্যালয়ের বাইরের।  

ভিতরে তখন দলীয় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক অরুন্ধতী মৈত্র, অভিনয়ের সুবাদে যিনি লাভলি মৈত্র নামে পরিচিত। যাঁরা বেরিয়ে আসার হুমকি দিচ্ছিলেন, তাঁদের উদ্দেশে বিধায়কের নামে পাল্টা স্লোগান দিতে শুরু করে আরেক পক্ষ। 'অরুন্ধতী মৈত্র জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ, অরুন্ধতী মৈত্র ডাক দিচ্ছে আমাদের সংগ্রাম চলছে চলবে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি।' মারমুখী মেজাজ। সঙ্গে নাগাড়ে গালিগালাজ। 

দাঁড়িয়ে দেখছিলেন রাজপুরের তৃণমূল নেত্রী কুহেলি ঘোষ। পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, কীভাবে বিধায়ক শিবিরের লোকজন তাঁকে পার্টি অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না। কুহেলি ঘোষের দাবি, '  আমি অনেক আগে এসেছি। কিন্তু আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা নিশ্চয় প্রোগ্রামটা রাস্তায় করব না। আপনার কাছে একটাই বলার, আমাদের প্রোগ্রামটা করতে দিন।' 

পুলিশ বোঝানোর চেষ্টা করে, তাঁর দলের MLA-এ তো ভিতরে আছেন ! নিজেরা কথা বলে নিন না। তখন কুহেলির পাল্টা দাবি, 'সুব্রত মুখোপাধ্যায় মারা গিয়েছেন। শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে এসেছিলাম। আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। স্মরণসভা করতে এসে দেখি আগে থাকতেই অনেক লোক রয়েছে। এমএলএ ম্যাডাম রয়েছেন। আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।'

কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরে আসেন সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক। পুলিশের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁর এক অনুগামী। তাঁর দাবি, ' ও নিজের পোস্ট পাওয়ার জন্য  যাদের সঙ্গে লড়াই করছে, তাঁরাও দলের লোক। রাস্তার মধ্যে এই লড়াইটাকে নামিয়ে এনেছে। ' 
 
কী নিয়ে এত অশান্তি?
স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে খবর, যাকে কেন্দ্র করে এত অশান্তি, তার মূলে রয়েছে এক পদের দুই দাবিদারের দ্বৈরথ। তৃণমূল সূত্রে খবর, রাজপুর টাউন তৃণমূল সভাপতির পদে দীর্ঘ ১৫ বছর দায়িত্বে ছিলেন শিবনাথ ঘোষ, এলাকায় তিনি শিবু নামে পরিচিত। গত ১৬ অগাস্ট তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলে কুহেলি ঘোষকে রাজপুর টাউন তৃণমূলের সভানেত্রী করা হয়। গণ্ডগোলের সূত্রপাত তখন থেকেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি কুহেলি ঘোষকেই টাউন সভানেত্রী হিসেবে মান্যতা দিয়ে আসছেন। রবিবার বৈকুণ্ঠপুরে আয়োজিত দলের বিজয়া সম্মিলনীর সম্বোধনপর্বেও তা স্পষ্ট হয়েছে। 

আরও পড়ুন : 

ব্যাঙ্কে জমা টাকার থেকে বেশি তুলতে পারবেন, বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে SBI



অন্যদিকে কুহেলি ঘোষকে টাউন সভানেত্রী মানতে নারাজ সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক। সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ দলীয় কর্মীদের নিয়ে রাজপুর তৃণমূল অফিসে একটি বৈঠক শুরু করেন তিনি। এক ঘণ্টার মধ্যে অন্য অনুষ্ঠান নিয়ে সেখানে হাজির হয় কুহেলি শিবির। শুরু হয় গণ্ডগোল। লাভলি মৈত্রj দাবি, 'কুহেলি ঘোষ, যার নাম ওয়েবসাইটে এসেছিল, সে গাজোয়ারি করে আজ এখআনে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু কুহেলিকে টাউন সভাপতির মান্যতা দিতে পারছি না।' 

দুপক্ষের গণ্ডগোলে এদিন হাতাহাতি হয় বলেও অভিযোগ। তৃণমূল সূত্রে খবর, দুই কর্মী আহত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সোনারপুর ও নরেন্দ্রপুর, দুই থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সবাইকে সরিয়ে দেয়।