হিন্দোল দে, দীপক ঘোষ, অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা ও বোলপুর: গতকাল মেদিনীপুরে বিজেপির জনসভায় দল বদল নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  অমিত শাহ। বলেছিলেন,  মমতাজিকে প্রশ্ন করব, আপনি যখন দল গঠন করেছিলেন, তখন সেটা দলবদল ছিল না। এর জবাবে তৃণমূল এদিন অমিত শাহকে তীব্র কটাক্ষ করেছে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এদিন বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলবদল করেননি। ১৯৯৮-এ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছিলেন।


শনিবার মেদিনীপুরে অমিত শাহর সভায়, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন আরও ৬ জন বিধায়ক, একজন সাংসদ। এর ফলে তৃণমূল জোর ধাক্কা খেয়েছে বলে দাবি করছে বিজেপি। সেই সঙ্গে ওই দিনের সভা থেকে তৃণমূল নেত্রীকেও দলবদলের খোঁচা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিন তারই জবাব দিল তৃণমূল।

সত্তরের দশকে কংগ্রেসেই রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ১৯৭৬ থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কংগ্রেস-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে, কংগ্রেসের টিকিটে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে সাংসদ হন মমতা।১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটে যাদবপুর কেন্দ্রে হেরে যান তিনি। এরপর ৯১ ও ৯৬-তে কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের হয়েই জয়ী হন মমতা। কিন্তু ৯৭-তে কংগ্রেস শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয় তাঁর। পরের বছর ৯৮-তে তৈরি করেন তৃণমূল কংগ্রেস।

তারপর শুধুই সাফল্য আর সাফল্য। যে পথে এবার কাঁটা বিছিয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি। একদিকে যখন নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে, মোদির সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সরব পঞ্জাব-হরিয়ানার চাষিরা, তখন কৃষকদের হাতিয়ার করেই মমতার সরকারকে আক্রমণ শানিয়েছেন অমিত শাহ।  তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি যে টাকা পাঠাচ্ছেন, কৃষকরা পাচ্ছে না কেন? বাংলার মানুষকে আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না কেন? যতক্ষণ তৃণমূল সরকাকে উতখান করতে না পারবেন, ততক্ষণ পাবেন না।

উত্তর ভারতের কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল। তা নিয়েও এদিন কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও।  অমিত শাহ বলেছেন, ভোটের আগে অন্তত গরিব কৃষকদের টাকা আটকাবেন না। ইতিমধ্যেই ২৩ লক্ষ কৃষক অনলাইনে আবেদন জানিয়েছেন। কেন বাংলার কৃষকরা বছরে ৬ হাজার টাকা পাবেন না। কৃষকদের টাকা আটকে তাঁদেরই আন্দোলনে সমর্থন!

এ ব্যাপারে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, কেন্দ্রের কৃষক প্রকল্প থেকে বাংলার প্রকল্প অনেক ভালো। কেন্দ্রের প্রকল্পের থেকে বেশি অনুদান বাংলার কৃষকরা পান।

কৃষকদের জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পাশাপাশি, স্বাস্থ্যবিমা ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু না হওয়া নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অমিত শাহ বলেছেন, চিকিৎসায় জনপ্রতি ৫ লক্ষ টাকা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কেন্দ্রের সেই টাকাও আটকে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। এটাই কি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন? এমন কিন্তু ভোটের পর আর পারবেন না, তৃণমূল যাচ্ছেই।

এর জবাবে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, আসলে বাংলার মানুষ স্বাস্থ্যসাথীতে বেশি টাকা পাচ্ছেন, তাই আয়ুষ্মান ভারতের প্রয়োজন হয়নি।

সব মিলিয়ে ভোট যত এগিয়ে আসছে, প্রকল্প নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে কেন্দ্র-রাজ্যের তরজা।কিন্তু কাদের প্রকল্পে কতটা উপকৃত হচ্ছে মানুষ?

উত্তর মিলবে এভিএম-এ।